Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অবরোধে দুর্ভোগ, রেলকে পাশেই পেলেন না যাত্রীরা

দিন চারেক আগেই রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে মিত্তল কলকাতায় বৈঠক করে বলেছিলেন, রেলের কর্মী-অফিসারদের নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে সময়ে ট্রেন চালাতে হবে। সময়ে ট্রেন চালাতে না-পারলে কেন সেটা করা গেল না, সেই ঘোষণাটুকু অন্তত সময়মতো করতে হবে।

ভোগান্তি: অবরোধের জেরে আটকে রয়েছেন অসংখ্য যাত্রী। শুক্রবার হাওড়া স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

ভোগান্তি: অবরোধের জেরে আটকে রয়েছেন অসংখ্য যাত্রী। শুক্রবার হাওড়া স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৪:০১
Share: Save:

রেল অবরোধের ঘোষণা হয়েছিল দিন সাতেক আগে। কিন্তু অবরোধের পরিণামে পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে চলে পারে, সেটা ধারণাই করে উঠতে পারেনি দক্ষিণ-পূর্ব রেল। তার জেরেই শুক্রবার চূড়ান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হল কয়েক হাজার যাত্রীকে।

অভিযোগ উঠেছে, অবরোধের জন্য সময়মতো ট্রেন তো চলেইনি। হাওড়া স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সাহায্য করার জন্য রেলের অফিসার-কর্মীদেরও দেখা যায়নি। ট্রেন বাতিল বা দেরিতে ছাড়ার ব্যাপারে ঠিকমতো ঘোষণা হয়নি। বোর্ডেও যথাযথ ভাবে তথ্য ফুটে ওঠেনি। কিছু ক্ষেত্রে যতটা দেরির কথা রেল জানিয়েছিল, বাস্তবে তার চেয়ে ঢের দেরিতে ট্রেন ছেড়েছে।

দিন চারেক আগেই রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে মিত্তল কলকাতায় বৈঠক করে বলেছিলেন, রেলের কর্মী-অফিসারদের নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে সময়ে ট্রেন চালাতে হবে। সময়ে ট্রেন চালাতে না-পারলে কেন সেটা করা গেল না, সেই ঘোষণাটুকু অন্তত সময়মতো করতে হবে। প্রয়োজনে ঘোষণার বাড়তি ব্যবস্থার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ দিন ট্রেন চলাচলের বিপর্যয় দেখে মনে হয়নি, বোর্ড-প্রধানের নির্দেশ রেলের কর্তা-কর্মীদের কানে ঢুকেছে!

অনেক যাত্রী বলছেন, অবরোধের জেরে সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু ট্রেন দেরিতে চলা বা বাতিল হওয়ার কথা আগেভাগে কেন জানানো হবে না? কেনই বা স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের ন্যূনতম পরিষেবার ব্যবস্থা করবে না রেল? কয়েক বছর আগে শিয়ালদহে ট্রেনের দেরির ব্যাপারে কোনও ঘোষণা না-হওয়ায় ক্ষিপ্ত যাত্রী-জনতা ভাঙচুর চালিয়েছিল। তার পরে রেল বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানও কলকাতায় এসে রেলের তথ্য যাত্রীদের ঠিকমতো জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন হাওড়ায় পৌঁছে মনে হলো, সেই নির্দেশও মনে নেই রেলকর্তাদের।

দক্ষিণ-পূর্ব রেল জানায়, এ দিন ভোর সাড়ে ৬টা থেকে উপজাতিদের একটি সংগঠন তাদের ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচিতে বালিচক, নেহুরসেনি, খেমাশুলি, শালবনি, ছাতনা, মধুকুন্ডা, গড়ধ্রুবেশ্বর, পিয়ার়ডোবা স্টেশনে অবরোধ শুরু করে। বহু ট্রেন আটকে যায়। বেশ কিছু ট্রেনকে ঘুরিয়ে দিতে হয়। কিছু ট্রেন বাতিলও করা হয়েছে। অবরোধের কথা অনেক আগে থেকে জানা সত্ত্বেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেল না কেন? রেলকর্তাদের বক্তব্য, অবরোধ ঠেকাতে রাজ্য প্রশাসন সক্রিয় হবে, এই আশাতেই বসে ছিলেন তাঁরা। তাই ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন বা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এ দিন করমণ্ডল এক্সপ্রেস চেপে সপরিবার চেন্নাই যাচ্ছিলেন ব্যারাকপুরের সুরঞ্জন দত্ত। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিবৃতি অনুযায়ী ২টো ৫০ মিনিটের ট্রেন এক ঘণ্টা দেরিতে চলছে। কিন্তু করমণ্ডল এক্সপ্রেস এ দিন হাওড়া থেকে ছেড়েছে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে! এই যে বাড়তি দেরি, তার জন্য কোনও ঘোষণা করা হয়নি বলে সুরঞ্জনবাবুর অভিযোগ। এ দিন সুরঞ্জনবাবুর মতো একই অভিজ্ঞতা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দূরপাল্লার কয়েক হাজার যাত্রীর। রেল কোনও তথ্য না-জানানোয় একের পর এক ট্রেনের যাত্রীরা এসে পৌঁছনোয় হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলিতে ঠাসাঠাসি ভিড় জমে যায়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রেলের অফিসারদের কারও দেখা মেলেনি।

বোর্ড-প্রধানের দাওয়াই অনুযায়ী ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়া তো দূরের কথা, এ দিনের বিপর্যয়ের দায়টুকুও স্বীকার করতে চায়নি দক্ষিণ-পূর্ব রেল। তারা বলছে, রেল সংক্রান্ত কারণে এ দিন অবরোধ হয়নি। তাই তার দায়ও রেলের নয়। ওই রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেছেন, “অবরোধের জের কয়েক দিন চলবে।” হাওড়া স্টেশন পূর্ব রেলের অধীন। ফলে ডিসপ্লে বোর্ড, ঘোষণার দায়িত্ব পূর্ব রেলের। ট্রেন কত দেরিতে ছাড়বে, আদৌ ছাড়বে কি না, ট্রেন বাতিল করা বা ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, সেই ঘোষণা সময়মতো হলো না কেন? ‘‘ঠিক কী হয়েছে, আমরা নিশ্চয়ই খোঁজখবর নেবো,’’ বলেন পূর্ব রেলের মুখপাত্র রবি মহাপাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Blockade Railway People অবরোধ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE