Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

টোল প্লাজার গোলকধাঁধায় নিবেদিতা সেতু

এ যেন গোলকধাঁধা! বালি থেকে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গাড়ি নিয়ে নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজায় যাচ্ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা স্বপন রায়। টোল ফ্রি রোডের পাশেই দেখতে পাচ্ছিলেন টোল প্লাজার রাস্তা। মনে হচ্ছিল কিছুটা এগোলেই পৌঁছে যাবেন টোল প্লাজার গেটে।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৯
Share: Save:

এ যেন গোলকধাঁধা!

বালি থেকে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গাড়ি নিয়ে নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজায় যাচ্ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা স্বপন রায়। টোল ফ্রি রোডের পাশেই দেখতে পাচ্ছিলেন টোল প্লাজার রাস্তা। মনে হচ্ছিল কিছুটা এগোলেই পৌঁছে যাবেন টোল প্লাজার গেটে। কিন্তু বামুনডাঙা আইল্যান্ডের কাছে আসতেই হকচকিয়ে গেলেন। রাতের অন্ধকারে তিন রাস্তার মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না কী ভাবে টোল প্লাজায় যাবেন!

শেষে স্থানীয় দোকানদারেরা তাঁকে জানালেন, ট্রাফিক আইন ভেঙে সেখানে ডানকুনির দিক থেকে বালির দিকে যাওয়ার একমুখী রাস্তাটি দিয়ে উঠে টোল প্লাজার দিকে যেতে হবে। অবশ্য সে জন্য গাড়ির দু’দিকের ইন্ডিকেটর জ্বালাতে হবে। কিন্তু কেন? স্থানীয়েরাই জানালেন, ওই রাস্তা না ধরলে কয়েক কিলোমিটার দূরের মোড় থেকে ঘুরে আসতে হবে। অগত্যা নিয়ম ভেঙে একমুখী রাস্তা দিয়েই টোল প্লাজায় পৌঁছলেন ওই ব্যক্তি।

শুধু স্বপনবাবু নন, প্রতিদিনই এ রকম অসংখ্য মানুষ বালির দিক থেকে নিবেদিতা সেতুতে উঠতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পুলিশের একাংশ অবশ্য এ জন্য দায়ী করছেন নকশার গলদকেই।

বালি থেকে দক্ষিণেশ্বরের দিকে যেতে গিয়ে অনেক সময়েই দেখা যায় বালি ব্রিজে বিশাল যানজট রয়েছে। তখন অগত্যা নিবেদিতা সেতু ধরেই গঙ্গা টপকে যেতে হয়। আবার বড় গাড়ি যেহেতু বালি ব্রিজ দিয়ে দক্ষিণেশ্বরের দিকে যেতে পারে না, তাই তাদেরও নিবেদিতা সেতুই ধরতে হয়। কিন্তু সমস্যা হল, বালির জিটি রোড বা বালি হল্ট থেকে সরাসরি নিবেদিতা সেতুর টোল প্লাজায় যাওয়ার কোনও উপায় নেই। যদিও বালি ঘাট স্টেশনের সামনে থেকে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের টোল ফ্রি রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে একেবারে পাশেই দেখা যায় টোলের রাস্তাটি। দু’টি রাস্তার মাঝে বাধা বলতে শুধু লোহার ব্যারিকেড।

প্রায় দেড় কিলোমিটার বামুনডাঙা আইল্যান্ড পর্যন্ত এ ভাবেই গিয়েছে রাস্তা দু’টি। এর মধ্যেই রয়েছে টোল প্লাজাও। বামুনডাঙা আইল্যান্ড থেকে আবার এই টোলের রাস্তাটি উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। ফলে কোনও জায়গা দিয়েই টোলে ঢোকা সম্ভব নয়। আর এ দিকে বামুনডাঙায় পৌঁছনোর পরেই শুরু হয় গোলকধাঁধা। এখান থেকে এক দিকে রাস্তা চলে গিয়েছে জয়পুরবিল ও ডানকুনির দিকে। একটি দিয়ে বালির দিক থেকে টোল ফ্রি রোড ধরে বামুনডাঙায় আসছে গাড়ি। আর একটি রাস্তায় ডানকুনির দিক থেকে বালির দিকে নেমে আসছে গাড়ি। এই তৃতীয় রাস্তাটির মুখেই বড় সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে পুলিশি সতর্ক বার্তা-‘ওয়ানওয়ে, রাস্তায় ওঠা বারণ’।

যদিও স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বড় থেকে ছোট সমস্ত গাড়িই টোল প্লাজায় যেতে ওই ওয়ানওয়ে ব্যবহার করে। পুলিশ সূত্রে খবর, এর ফলে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনাও ঘটছে। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। এ দিকে, ওই ওয়ানওয়ে দিয়ে না গিয়ে নিয়ম মতো টোল প্লাজায় যেতে গেলে দু’টি পথ রয়েছে। এক, বামুনডাঙা আইল্যান্ড থেকে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ডানকুনি মোড়ের কাছ থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফের বালির দিকে এসে টোল প্লাজায় ঢুকতে হবে। তাতে অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে সাত কিমি ঘুরতে হবে। দুই, ওই আইল্যান্ড থেকে বাঁদিক ঘুরে ডানকুনির দিকে না গিয়ে ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে লিলুয়া জয়পুর বিলের কাছে আন্ডারপাস থেকে ঘুরে টোলে আসতে হবে। তাতে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিমি ঘুরতে হচ্ছে গাড়িকে। তবে এই রাস্তাটি খুবই অন্ধকার হওয়ায় দুর্ঘটনার সম্ভবনা বেশি।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক ট্র্যাফিক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বিকল্প কী করা যায়, সে জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রয়োজনে বামুনডাঙা আইল্যান্ডের সামনে একমুখী রাস্তাটি আরও চওড়া করা যেতে পারে। সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়েকটি ছোট আইল্যান্ড করে দিলে ডানকুনির দিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগার সম্ভবনাও কম। তাতেই বামুনডাঙা থেকে সোজা মাত্র চারশো মিটার উঠলেই টোল প্লাজার রাস্তায় পৌঁছনো যাবে।’’

যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কলকাতা ডিভিশনের অধিকর্তা এস কে কুশওয়াহা বলেন, ‘‘বালির দিক থেকে গঙ্গা টপকে যাওয়ার জন্য বালি ব্রিজ রয়েছে। সেখানে যানজট তো আর সব সময় হয় না। তাই নিবেদিতা সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তার দরকার নেই বলেই মনে হয়। ডানকুনি ও রানিহাটির দিক থেকে যারা আসছেন, তাঁরা সহজেই টোলে যেতে পারছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nivedita Setu Toll Plaza
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE