রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত হয়েছে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে শাসক দল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন, এমন নজির তথ্যপঞ্জিতে বিশেষ মিলছে না!
পিছিয়ে যাওয়া যেতে পারে সেই ১৯৬৭ সালে। রাজ্যপাল ধর্মবীর তিন দিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় জবাবে লিখলেন, বিধানসভার অধিবেশন ডাকাই আছে। তখনই যা হওয়ার, হবে। রুষ্ট রাজ্যপাল মন্ত্রিসভাকে বরখাস্তের সুপারিশ করে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। কেন্দ্রের সঙ্গে বিদায়ী সরকার এবং যুক্তফ্রন্ট শরিকদের বিবাদ চরমে উঠল। সে জমানায় কেন্দ্রের শাসক দলের বিরোধী কোনও দল বা জোটের রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির ভূরি ভূরি নজির ছিল।
যুক্তফ্রন্ট পেরিয়ে বামফ্রন্ট সরকার আসার পরেও বিবাদ বেধেছিল রাজভবনের সঙ্গে। রাজ্যপাল বি ডি পান্ডের নাম সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত দিয়েছিলেন ‘বাংলা দমন’ পান্ডে! রাজ্যপালের ভূমিকার প্রতিবাদে মিছিল করেছিল শাসক দল। ভৈরব দত্ত পান্ডের উত্তরসূরি অনন্ত প্রসাদ শর্মা বা আরও ৬ বছর পরে টি ভি রাজেশ্বরের সঙ্গেও বনিবনা হয়নি বাম সরকারের। দুই রাজ্যপালই বছরখানেকের বেশি রাজভবনে থাকেনি। আটের দশকে সরকারিয়া কমিশনের কাছে সিপিএম রিপোর্ট দিয়ে বলেছিল, আলঙ্কারিক রাজ্যপাল পদটি রাখারই প্রয়োজন নেই।
রাজ্যপালদের সঙ্গে তাঁর সরকার এবং দলের এমন বিবাদের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু অবশ্য মুখ খোলেননি। আবার বাম জমানার প্রথম রাজ্যপাল ত্রিভুবন নারায়ণ সিংহের চলে যাওয়ার সময়ে বিরাট বিদায় সংবর্ধনার ইতিহাসও আছে। জ্যোতিবাবুর পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মহাকরণের চেয়ারে আসার পরে বড়সড় সংঘাত বেধেছিল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর সঙ্গে। রাজ্যপাল পদে গোপালকৃষ্ণ বাম নেতাদেরই পছন্দের মানুষ ছিলেন। কিন্তু সেই গোপালকৃষ্ণই রাজ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কটে ভুক্তভোগীদের সমস্যা ভাগ করে নেবেন
বলে দু’ঘণ্টা করে রাজভবন নিষ্প্রদীপ রাখতে শুরু করলেন।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবু মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘এটা না করলেই ভাল হতো। রাজভবনে আলো নিভিয়ে রাখলে কি বিদ্যুৎ সমস্যা মিটে যাবে?’’ আর নন্দীগ্রামের ঘটনার পরে গোপালকৃষ্ণ ‘হাড় হিম করা সন্ত্রাসে’র কথা লিখে বিবৃতি জারি করলেন। রাজ্যপাল এ ভাবে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে পারেন কি না, শুরু হয়েছিল প্রবল বিতর্ক।
বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতিয়ার হয়েছিল গোপালকৃষ্ণের মন্তব্য। সিপিএমের সভা থেকে বিনয় কোঙার, শ্যামল চক্রবর্তীরা রাজ্যপালকে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন! কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। অপ্রসন্ন মনোভাব নিয়েও রাজভবনে গোপালকৃষ্ণের মধ্যস্থতায় সিঙ্গুর নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার পাঁচ বছর পরে তাঁর সাম্প্রতিক বইয়ে বুদ্ধবাবু অবশ্য প্রকাশ করেছেন, রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণের ভূমিকায় তিনি
ব্যথিত হয়েছিলেন।
সংসদীয় ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত রাজ্যের এক প্রবীণ বিধায়কের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন, রাজ্যপাল হুমকি দিয়েছেন। রাজভবন আবার পাল্টা বিবৃতিতে বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর বয়ানে তারা বিস্মিত। এমন আগে ঘটেছে বলে মনে পড়ছে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy