ঝুঁকি: এখনও ফেরেনি হুঁশ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
সকাল ১০টা। খড়দহ স্টেশন। ডাউন লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যারাকপুর-শিয়ালদহ লোকাল। যে কোনও মুহূর্তে ছাড়বে। হঠাৎই এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছুটে এসে এক যুবক আপ লাইন পেরিয়ে সবে ছেড়ে দেওয়া ট্রেনটির প্রথম কামরায় উঠে পড়লেন। কানে তখন ইয়ারফোন গোঁজা।
লাইন পার হওয়ার সময়ে ওই যুবকের নজর ছিল দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের ট্রেন ছেড়ে গেল কি না, সে দিকে। ফলে তিনি দেখলেনও না, তখনই আপ লাইনে প্রায় ঘাড়ের উপরে এসে পড়েছে আর একটি লোকাল। কয়েক জন চিৎকার করলেও ইয়ারফোন গোঁজা থাকায় ট্রেনের হর্ন শুনতে পাননি ওই যুবক।
প্ল্যাটফর্ম থেকে খুব বেশি হলে কুড়ি মিটারের ব্যবধান। বৃষ্টির জলেও ধুয়ে যায়নি রক্তের দাগ। রেললাইনের ধারে পড়ে বছর কুড়ির তরুণের পোশাকের ছেঁড়া টুকরো। মঙ্গলবার এ ভাবেই ইয়ারফোন গুঁজে লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে কলেজ-ছাত্র সোহম মৈত্রের। তবুও যাত্রীদের একাংশের হুঁশ ফেরেনি, এই ছবি থেকেই তা স্পষ্ট।
স্টেশন দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন পূর্ত দফতরের কর্মী গোপাল সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ইয়ারফোন গুঁজে রাস্তায় চলা অসুখের পর্যায়ে চলে গেছে। এখন তো দেখি হাঁটতে হাঁটতে অনেকে সিনেমাও দেখেন। সময়ের একটু হেরফেরে যে প্রাণ চলে যেতে পারে, সেই বোধ এখনও কেন ওঁদের আসছে না, বুঝতে পারি না।’’
সকাল সাড়ে দশটায় স্টেশনে পাওয়া গেল এক জনকে। ‘ব্লু-টুথ ইয়ারপ্লাগ’ গোঁজা। তিনি এলেন চার নম্বর লাইনের দিক থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেন ধরতে। ইশারায় প্রশ্ন করতেই ইয়ারপ্লাগ খুললেন। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার কথা জানেন? জানালেন, জানেন। তার পরেও ইয়ারপ্লাগ লাগিয়ে লাইন পার হচ্ছেন কেন? একগাল হেসে ইয়ারপ্লাগ ব্যাগে ভরে ‘সরি’ বলে হাঁটা লাগালেন অন্য দিকে। বললেন, “আমার পিছনের দিকে উঠলে সুবিধা হয়, এগোলাম।”
একই ঘটনা ব্যারাকপুর স্টেশনেও। ১৪ নম্বর রেলগেট দিয়ে ইয়ারফোন লাগিয়ে লাইন পার হতে দেখা গেল অনেককেই। লাইন পেরোনোর সময়ে কেউ ডানে-বাঁয়ে তাকিয়ে দেখছেন না, কোনও দিক দিয়ে ট্রেন আসছে কি না। এমনকি লেভেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও যে ভাবে ট্রেনের প্রায় সামনে দিয়ে মোটরবাইক, সাইকেল অটো চলাচল করে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের তরফে সব সময়ে সচেতনতার প্রচার করা হয়। ব্যস্ত সময়ে মাইকে বারবার ঘোষণা করা হয়, কেউ যাতে মোবাইল কানে বা হেডফোন লাগিয়ে লাইন পারাপার না করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy