দেবজিত্ সরকার।
কাটমানি (বখরা) ফেরানোর দাবিতে তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে চড়াও হওয়ার ডাক দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বলেছেন, ওই কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দেবেন তাঁরা। দিলীপবাবুর ওই পরামর্শের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার হুমকি— তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে আসার পথে শাসক দলের কর্মীদের আটকে কাটমানি ফেরত চাওয়া হবে। এমনকি, তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি যেখানে, সেই এলাকার উল্লেখ করে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারের হুমকি, সেখানেও কাটমানি ফেরত চাইতে যাবে লোকে।
প্রতি বছর ২১ জুলাই তৃণমূলের ‘শহিদ’ সমাবেশে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থকেরা আসেন ধর্মতলায়। নানা জেলা থেকে কলকাতার দিকে আসা গাড়ি বা বাস আটকে বিজেপি সে দিন বিশৃঙ্খলা ও গণ্ডগোল পাকাতে চায় বলেই তৃণমূলের আশঙ্কা। তাদের পাল্টা হুঁশিয়ারি, মানুষ খেপানোর রাজনীতি করলে তার চরম ফল পাবে বিজেপি।
বখরা ফেরতের দাবিতে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক হাজরা মোড়ে বিজেপির সভা থেকে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ বলেন, ‘‘এটাই তো ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তৃণমূলের শেষ ২১ জুলাই। অতএব, আপনারা সেটা ভাল করে, মন দিয়ে করুন। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের বলছি, ওই সভায় আসার আগে যে যা কাটমানি নিয়েছেন, ফেরত দিয়ে আসবেন। না হলে যখন বাসে করে সভায় যাবেন, তখন রাস্তায় অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকবে। তাঁরা বাসে উঠে টাকা ফেরত চাইবেন। বলবেন, ওই যে নেতা, ওই যে নেতার চামচা, বেলচা। আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে সভায় যান। সুদও জনগণ দাবি করতে পারেন।’’ এর পরে আবার ব্যাখ্যা দিয়ে দেবজিৎ বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরা বাস আটকাবেন না। মেজ, সেজ, ছোট, ন, রাঙা— নানা রকমের তৃণমূল কর্মীরাই বাস আটকাবেন।’’
বস্তুত, এ দিনের সভায় বিজেপি নেতারা বোঝাতে চেয়েছেন, বখরার ২৫% নিয়েছেন শাসক দলের তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীরা। আর ৭৫% জমা পড়েছে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘরে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘কেউ বলছে কালীঘাটে, কেউ বলছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে, কেউ বলছে তৃণমূল ভবনে কাটমানি আছে। যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেব। বিজেপিকে শুধু ক্ষমতায় আনুন।’’
বিজেপি নেতাদের এই সব অভিযোগ ও হুঁশিয়ারিকে অবশ্য রাজ্যে অস্থিরতা তৈরির চক্রান্ত হিসাবে দেখছে তৃণমূল। দলের নেতা তথা মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাকার খেলায়, ইভিএম কারচুপি করে কয়েকটা আসন পেয়ে বিজেপির বুদ্ধি লোপ হয়েছে। ক্ষমতার উন্মত্ততায় ওরা ভুলে যাচ্ছে রাজ্যে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সরকার এবং সেই সরকারই থাকবে। এখনও লোকসভায় এ রাজ্য থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন তৃণমূলেরই আছে।’’ এর পরেই রাজীববাবু হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘মানুষ খেপানোর এই রাজনীতি যে কত ভয়ঙ্কর, সেটা বোঝার ক্ষমতা বিজেপির ওই চুনোপুঁটি নেতাদের নেই। তাই ওঁরা রক্তস্নান করানোর মরণখেলায় মাততে চাইছেন। আমরা সাবধান করে দিতে চাই, সংযত না হলে এর চরম ফল বিজেপিকে ভুগতে হবে। পাল্টা প্রতিরোধ করতে রাজ্যের মানুষ জানে। তখন ওঁদের লোকজনেরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন তো?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ওদের নেতা-মন্ত্রীরাও অনবরত এখানে আসা-যাওয়া করেন। ভুলে যাবেন না, রাজ্যের মানুষ জবাব দিতে শুরু করলে বাঁচানোর জন্য পাশে কেউ থাকবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy