Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোবাইলের শখ মেটাতে গিয়ে ধৃত

কী ভাবে টাকা আসবে হাতে জানা নেই। সিনেমা দেখতে দেখতে ফন্দিটা মাথায় আসে। ঠিক করে, অপহরণ করে টাকা চাওয়াটাই সহজ রোজগারের পথ। আরও সহজ হল, স্রেফ অপহরণের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়। রাতারাতি বড়লোক হতে গেলে ঝুঁকি তো একটু নিতেই হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share: Save:

কলেজে ওঠা ইস্তক বন্ধুবান্ধবকে দামি মোবাইল ব্যবহার করতে দেখত। দেখত, ঝাঁ চকচকে মোটর বাইকে কেমন ঘুরে বেড়াচ্ছে বন্ধুরা।

শখ চেপেছিল গরিব পরিবারের ছেলেটিরও। মনে হয়েছিল, মোবাইল, বাইক না পেলে জীবনটাই বৃথা।

কী ভাবে টাকা আসবে হাতে জানা নেই। সিনেমা দেখতে দেখতে ফন্দিটা মাথায় আসে। ঠিক করে, অপহরণ করে টাকা চাওয়াটাই সহজ রোজগারের পথ। আরও সহজ হল, স্রেফ অপহরণের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়। রাতারাতি বড়লোক হতে গেলে ঝুঁকি তো একটু নিতেই হয়।

এই চিন্তাই কাল হল।

হুমকি ফোন করে টাকা আদায়ের ছক কষে ফেলে হাবরার আনোয়ারবেড়িয়ার কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণ। এলাকার ইমারতী ব্যবসায়ী সাহজাহান বাদশা মণ্ডলকেও পেয়ে যায় পাশে। ঠিক হয়, জমি মাপজোকের কাজ করেন আমিন কাশেম মণ্ডল। তাঁর ছেলে পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। তাকেই অপহরণের হুমকি দিয়ে চাওয়া হবে ৩ লক্ষ টাকা। বখরা হবে ফিফটি-ফিফটি।

সিনেমার দৃশ্য বুদ্ধি জুগিয়েছিল, নিজেদের নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া যাবে না। কিন্তু নতুন সিমকার্ড কিনতে গেলে এখন অনেক হ্যাপা। পরিচয় গোপন রাখা মুশকিল। এ দিক ও দিক খোঁজ করতে করতে পরিচিত এক কিশোরীর বাড়িতে অব্যবহৃত একটি সিম কার্ডের সন্ধান মেলে। পরিচিত দাদারা কোনও জরুরি কাজের জন্য চাইছে মনে করে সেটা তাদের দিয়েও দেয় মেয়েটি।

ছাত্রটি নিজের ফোনে সেই সিম ঢুকিয়ে গলা পাল্টে ফোন করে কাশেমকে। বলে, ৩ লক্ষ টাকা না দিলে ছেলেকে অপহরণ করবে। খুন করবে। একই দিনে বার তিনেক এই ফোন পেয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকেন কাশেম। কোথায় গিয়ে টাকা দিতে হবে, তা পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছিল ফোনের ও প্রান্তের ভারী কণ্ঠ। সেই ফোনের জন্যই অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি।

এরপরে সিমটি ওই কিশোরীকে ফিরিয়ে দেয় সাহজাহানরা। উপায়ন্তর না দেখে দিন দু’য়েক পরে, ২৮ নভেম্বর হাবরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন কাশেম।

আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় একটি তদন্ত দল তৈরি করেন। কোন নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তার সূত্র ধরদে তদন্তে নামে পুলিশ। সন্ধান মেলে ওই কিশোরীর। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ মেয়েটির পরিচিত ‘দাদা’র নাম জানতে পারে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই ছাত্র ও তার সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ৭ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, ৩ লক্ষ টাকা অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগাভাগির কথা হয়েছিল দু’জনের। টাকা কোথায় নেওয়া হবে, তারও ছক কষা হয়েছিল। ফোন করে কাশেমকে ওই এলাকায় ডেকে আনা হত। রাস্তার পাশে ব্যাগ ফেলে চলে যেতে বলা হবে কাশেমকে, এমনটাই ঠিক হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Extortion Case Habra হাবরা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE