Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নির্যাতিতার মা ধৃত পুরুলিয়ায়

পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে সনাতনের বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে থেকে মাসখানেক ধরে পরিচারিকার কাজ করছিলেন ওই শিশুর মা। সম্প্রতি পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে ডাক্তারেরা বুঝতে পারেন, শিশুটির উপরে নির্যাতন হয়েছে।

অস্ত্রোপচারের আগে দেহে বিঁধে থাকা সূচ। —ফাইল চিত্র।

অস্ত্রোপচারের আগে দেহে বিঁধে থাকা সূচ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৪:৫৩
Share: Save:

নির্যাতিতা শিশুর মাকেই গ্রেফতার করল পুরুলিয়ার পুলিশ। শনিবার রাতে পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘পকসো (প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইন ও ৩০২ ধারায় শিশুর মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ শিশুর দিদিমাকে আটক করা হয়েছে। এ দিন বিকেলে দু’জনকে কলকাতা থেকে প্রথমে আটক করে এনেছিল পুলিশ। তবে প্রধান অভিযুক্ত বছর বাষট্টির সনাতন গোস্বামীকে (ঠাকুর) ধরা যায়নি। শিশুটির মৃত্যুতে লোকজন খেপে ওঠায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শনিবার ভোরে কলকাতাতেই মেয়েটির সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।

পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়া গ্রামে সনাতনের বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে থেকে মাসখানেক ধরে পরিচারিকার কাজ করছিলেন ওই শিশুর মা। সম্প্রতি পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে ডাক্তারেরা বুঝতে পারেন, শিশুটির উপরে নির্যাতন হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে সাড়ে তিন বছরের ওই মেয়ের শরীর থেকে সাতটি সুচ বার করা হয়। শুক্রবার সে মারা যায়। ভবানীপুর থানা এ দিন মৃতদেহ পুরুলিয়া পুলিশকে দেয়। তারপরেই সৎকার করা হয়।

মেয়েটির মা চাইল্ডলাইনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, সনাতনই ওই শিশুর উপরে ‘অত্যাচার’ করেছে। তখন পুলিশ সনাতনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছিল। ‘পকসো’ আইনেও মামলা হয়। এ বার কি সনাতনের বিরুদ্ধে খুনের (৩০২ ধারা) মামলা করা হবে? পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘তদন্ত এগোক। পরে সব বলব।’’ তবে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়েটির মৃত্যুর পরে সনাতনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের মামলা যোগ করা হয়েছে।

রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘ঘটনায় শিশুটির মা যুক্ত থাকতে পারেন বলে আমরা সন্দেহ করছিলাম। পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম।’’ তিনি জেলাশাসককে সামাজিক-তদন্ত করতে চিঠি দেন। জেলাশাসক জানান, সামাজিক-তদন্ত করতে প্রশাসনের দল শীঘ্রই নদিয়াড়া যাবে। সনাতনের খোঁজে ঝাড়খণ্ডের পরে এ বার উত্তরপ্রদেশে গিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের দল। ঝাড়খণ্ড, বিহারেও নজরদারি চলছে।

সনাতনের বাড়ির উঠোনে শুক্রবার রাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিশুটিকে স্মরণ করেন পড়শিরা। সেখানে হাজির ছিলেন সনাতনের দুই পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনিও। সনাতনের ছেলে লক্ষ্মণ এ দিনও বলেন, ‘‘বাবা ঘৃণ্য কাজ করেছে। কঠিনতম শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE