Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দুর্ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার মামলা রাজ্যের

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চাওয়া রিপোর্টের প্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হচ্ছে, সোমবারের ঘটনায় তাদের দিক থেকে কোনও গাফিলতি ছিল না। বরং, পুলিশ সক্রিয় না হলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারত।

পরিদর্শন: সভার মাঠে এডিজি (আইবি)। রয়েছেন এসপি-ও। নিজস্ব চিত্র

পরিদর্শন: সভার মাঠে এডিজি (আইবি)। রয়েছেন এসপি-ও। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪০
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে শামিয়ানা ভেঙে পড়ার ঘটনায় উদ্যোক্তা বিজেপি এবং ডেকরেটর সংস্থার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টা এবং গাফিলতির মামলা রুজু করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। মোট চারটি ধারায় মামলা হয়েছে। তবে অভিযোগকারীদের পরিচয় জানাতে চায়নি কোতয়ালি থানা। গোটা ঘটনার তদন্তভার মঙ্গলবারই হাতে নিয়েছে সিআইডি। তারই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চাওয়া রিপোর্টের প্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হচ্ছে, সোমবারের ঘটনায় তাদের দিক থেকে কোনও গাফিলতি ছিল না। বরং, পুলিশ সক্রিয় না হলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারত। বিজেপি অবশ্য গাফিলতির দায়ে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার পথে যাচ্ছে। গোটা ঘটনায় তারা এখন ‘ষড়যন্ত্রে’র গন্ধ পাচ্ছে।

তবে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে এসপিজি এবং এনএসজি। সভার আগে এসপিজি সাত দিন ধরে ওখানেই ছিল। পুলিশকেও ঢুকতে দেয়নি। তাই আগে থেকে পুলিশের কিছু করার ছিল না। সভায় লোহার কাঠামোর উপরে যে ভাবে প্রচুর মানুষ উঠে পড়েন, তাতে কর্মীদের উপরে বিজেপি নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণহীনতাই প্রশাসনের চোখে পড়েছে। তবে রাজ্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা প্রাথমিক ভাবে যে রিপোর্ট নবান্নে পাঠিয়েছেন, তাতে প্যান্ডেলের কাঠামো তৈরিতেও বিস্তর ত্রুটি ধরা পড়েছে। মাটি বৃষ্টিতে ভিজে নরম হয়েছিল, দু-একটি জায়গায় জল জমে থাকার নমুনাও পাওয়া গিয়েছে বলে খবর।

পুলিশ উদ্যোক্তাদের দায়ী করলেও প্রধানমন্ত্রীর সভায় দুর্ঘটনার মুহূর্তের ফুটেজের অবশ্য হদিশ নেই! পুলিশ যে সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিল, তাদের লাগানো ২৪টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে মাত্র ৮টি চালু ছিল! ফাঁপরে পড়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে ফুটেজ চেয়েছে পুলিশ।

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর বক্তব্য, ‘‘মাঠে পুলিশ সুপার ছিলেন না। এসপিজি-ও ফোন করে তাঁকে পায়নি। প্রধানমন্ত্রী ঘুরে চলে যাওয়ার পরে ডিএম, এসপি হাসপাতালে যান। প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা হবে ডিএম, এসপিকে পার্টি করে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও আমরা অভিযোগ জানাব। গোটা ঘটনায় মনে হচ্ছে, এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে!’’

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের তিন প্রতিনিধি মঙ্গলবার কলকাতা পৌঁছে ভবানীভবনে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর সঙ্গে বৈঠক করেন। কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিষয়ক সচিব এস কে সিন্হা এবং যুগ্ম সচিব আরতি ভাটনগর এই দলে রয়েছেন। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, ডিজি কেন্দ্রীয় দলকে জানিয়ে দেন, পুলিশ তার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছে। লোকসমাগম, বৃষ্টি, গাড়িতে রাস্তা অবরোধ হয়ে যাওয়ার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা পুলিশ সঠিক ভাবেই সামলেছে। পুলিশ কেন্দ্রীয় দলকে জানিয়েছে, এত বড় সমাবেশে মাত্র ৭০০ জন স্বেচ্ছাসেবক ছিল। যা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজনীয় রিপোর্ট রাজ্য পুলিশ কেন্দ্রকে দিয়ে দেবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় দলটি এ দিনই মেদিনীপুরে সভাস্থল ঘুরে দেখে এবং সার্কিট হাউসে দফায় দফায় কথা বলে বিজেপি নেতা এবং পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের দাবি, “কেন্দ্রীয় আধিকারিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, ক’বার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছিল। আমরা বলেছি, এক বারও হয়নি। সব শুনে দলটি অবাকই হয়েছে।” বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, তাঁরা শুধু ডেকরেটরকে বরাত দিয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা-সহ টেকনিক্যাল দিক খতিয়ে দেখার জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের সহযোগিতা কেন পাওয়া গেল না? ভিড় নিয়ন্ত্রণ বা দুর্ঘটনার পরে উদ্ধারকাজে পুলিশ সক্রিয় ছিল না বলেও বিজেপির অভিযোগ।

রাজ্য ফরেন্সিক দল অবশ্য ছাউনি নির্মাণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত গাফিলতির কথাই বলছে। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং নমুনা সংগ্রহ শেষে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার চিত্রাক্ষ সরকার বলেন, “এটা দুর্ঘটনাই। তবে তার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে। কাঠামো ভেঙেছে ভরের অসম বণ্টনের জন্য।’’ সিআইডি-র কর্তারাও দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। রাজ্যের এডিজি (আইবি) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এ দিন মাঠে গিয়েছিলেন। তবে কেউ কোনও মন্তব্য করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE