Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টানাপড়েনের মাঝেই হল ময়না-তদন্ত

শনিবার বিকেলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’বছরের অরুন্ধতী ভদ্রের ময়না-তদন্ত হয়। এর পরে তার দেহ অরুন্ধতীর মা দেবযানী গোস্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। মেয়ের শেষকৃত্যের জন্য সন্ধ্যায় তিনি মৃতদেহ নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে রওনা হন।

অরুন্ধতী

অরুন্ধতী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০৪
Share: Save:

আড়াই দিন পরে শেষ হল ‘যুদ্ধ’!

শনিবার বিকেলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’বছরের অরুন্ধতী ভদ্রের ময়না-তদন্ত হয়। এর পরে তার দেহ অরুন্ধতীর মা দেবযানী গোস্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। মেয়ের শেষকৃত্যের জন্য সন্ধ্যায় তিনি মৃতদেহ নিয়ে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে রওনা হন।

বুধবার রাতে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় অরুন্ধতী। এর পরেই ময়না-তদন্ত নিয়ে শুরু হয় তার বাবা-মায়ের টানাপড়েন। কোথায় ময়না-তদন্ত হবে, তা নিয়েও টানাপড়েন শুরু হয় শুক্রবার। কখনও কাটাপুকুর, আবার কখনও মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে যায়। একরত্তি মেয়ের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বাবা-মায়ের মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে। চলে একে অপরকে দোষারোপের পালা।

শনিবার দিনভর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে উপস্থিত ছিলেন অরুন্ধতীর বাবা-মা। দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পরে দেবযানী বলেন, ‘‘মেয়ের শেষ কাজ ভালভাবে করতে চাই। অরুন্ধতীর বাবা ও তাঁর পরিবার চাইলে সঙ্গে যেতে পারেন। মেয়েকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি না। আগেও যাইনি। কিন্তু তবুও অনেক ঝামেলা সহ্য করতে হল।’’ অরুন্ধতীর বাবা রামচন্দ্র ভদ্র অবশ্য মেমারি যেতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়ে সবটা নিয়ম মাফিক হোক সেটা চেয়েছিলাম।
তাই ময়না-তদন্তের দাবি জানিয়েছিলাম। মেয়েকে কখন, কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, সেটাও জানতে পারিনি। শুধু মারা যাওয়ার পরে একটা এসএমএস পেয়েছিলাম। মরা মেয়েকে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমার এবং পরিবারের জন্য মেমারি নিরাপদ নয়। ওখানে গেলে হেনস্থা হতে পারি। আগেও হয়েছি। তাই যাব না।’’

গত বছর অগস্ট মাস থেকে অরুন্ধতীকে নিয়ে রামচন্দ্র এবং দেবযানীর মধ্যে টানাপড়েন চলছে। গলায় দুধ আটকে কোমায় চলে যাওয়া অরুন্ধতীকে ভেন্টিলেশনে রাখা হবে নাকি ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হবে, সেই বিতর্ক গড়িয়েছিল আদালতের দরজা পর্যন্ত। রামচন্দ্র অভিযোগ করেছিলেন, টাকার জন্য অরুন্ধতীকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। যদিও দেবযানীর দাবি ছিল, অরুন্ধতী সুস্থ হয়ে উঠবে। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা জরুরি। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আদালতের নির্দেশে মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নয় সদস্যের একটি দল অরুন্ধতীকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁরা রিপোর্টে জানান, ভেন্টিলেশনে রেখে তার চিকিৎসা চালাতে হবে। বুধবার রাত দু’টো নাগাদ অবশ্য এই সব বিতর্ক শেষ হয়ে গিয়েছে। অরুন্ধতীকে আর ভেন্টিলেশনে থাকতে হবে না। কিন্তু মৃত্যুর পরেও তার টানাপড়েন শেষ হল না!

এ দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ওই পরিবারকে জানিয়েছে, সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতিতেই মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। তবে কয়েক মাস পরে রিপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে। অরুন্ধতীর বাবা বলেন, ‘‘অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট পাওয়া গেলেই সবটা বোঝা যাবে।’’ আর তার মায়ের কথায়, ‘‘সবই আইন মেনে করেছি। ওর বাবার জন্যই ওকে এত টানাপড়েনে পড়তে হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE