উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
এলাকার জনপ্রিয় নেতা উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুনের ঘটনায় এলাকাবাসী এবং দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ কতটা, তার আঁচ রবিবার বিল্বগ্রামে পৌঁছে কিছুটা টের পেলেন আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন, সেই দাবি করে দলের কর্মীদের একাংশ খুনিদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়ে স্লোগান তুললেন।
বুধবার রাত ৮টা নাগাদ বনপাশ স্টেশন এলাকায় চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় তৃণমূলের বিল্বগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে উজ্জ্বলের ভাই সজল আউশগ্রাম থানায় ওই অঞ্চলেরই তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি জয়দেব মণ্ডল-সহ ১৪ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই হত্যাকাণ্ডের পরে পরেই এলাকায় জনরোষ ছড়িয়েছিল। ভাঙুচর হয়েছিল একাধিক অভিযুক্তের বাড়ি। খুনের চার দিন পরে, এলাকায় পা রাখলেন বিধায়ক। সঙ্গে ব্লকের যুব তৃণমূলের সভাপতি প্রশান্ত গোস্বামী।
খুনের পর থেকেই কোনও তৃণমূল নেতা উজ্জ্বলের বাড়ি যাননি বলেও ক্ষোভ ছিল দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে। রবিবার বিধায়ক নিহতের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বৃদ্ধা মা এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবারের লোকজন বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানানোর দাবি জানালে অভেদানন্দ তাঁদের বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জেনেছেন এবং এ ব্যাপারে যা বলার বলেছেন।’’ এর পরে সজলের সঙ্গেও একান্তে কিছুক্ষণ কথা বলেন অভেদানন্দবাবু। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনই রাধাবল্লভ ঘোষ নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের নাম এফআইআরে আছে। এই নিয়ে উজ্জ্বল-খুনে মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করা হল।
বিধায়কের আসার খবর পেয়ে বিল্বগ্রাম, বেলারী, ভাদা, ভোতা, আসিন্দা, তকীপুর থেকে প্রায় হাজার খানেক কর্মী এদিন হাজির হয়েছিলেন উজ্জ্বলের বাড়িতে। বিধায়ককে কাছে পেয়ে দোষীদের শাস্তির দাবিতে তাঁরা সরব হোন। তিনি নিহতের বাড়ি থেকে বেরনোর পরেও অনেকটা রাস্তা তাঁর পিছনে হেঁটে কর্মী-সমর্থকেরা স্লোগান তোলেন, ‘দোষীদের শাস্তি চাই, শাস্তি চাই’। সমবেত স্লোগাতে বিধায়ককে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায়। দোষীদের ধরার ব্যাপারে কর্মী-সমর্থকদের আশ্বাস দেন তিনি।
বিধায়কের কাছে দলের আউশগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি শেখ সালেক রহমানের বিরুদ্ধেও সরব হতে দেখা যায় কর্মী-সমর্থকদের একাংশকে। তাঁদের দাবি, খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত জয়দেব মণ্ডলকে কার্যকরী সভাপতি করেছিলেন ব্লক সভাপতিই। তার পর থেকেই এলাকায় জয়দেবের প্রতাপ বেড়ে যায়। এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সূত্রপাতও তখন থেকে। তার জেরেই খুন হতে হয়েছে অঞ্চল সভাপতিকে। যদিও এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে চাননি বিধায়ক। তিনি শুধু বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষ কিছুটা ক্ষুব্ধ। তাঁরা দোষীদের ধরার দাবি জানিয়েছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ ছ’জনকে ধরেওছে।’’
ব্লক সভাপতির পাল্টা দাবি, ‘‘সিপিএমের উস্কানিতেই কিছু মানুষ এ ভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। দলের তরফ থেকে ওই এলাকার দলীয় কর্মী এবং উজ্জ্বলদার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’’ এলাকায় অশান্তি রুখতে এখনও যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, রবিবার বিকেলে বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে বিল্বগ্রামের বুথ সভাপতি এবং কয়েক জন কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন দলের আউশগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল। বৈঠকে ব্লক সভাপতি এবং উজ্জ্বলের ভাইও হাজির ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy