ফেরা: পঙ্কজকে বাবা-মার হাতে ফিরিয়ে দিল পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
ব্যস্ত জিটি রোডে নিমতলার মোড়ে বারবার এ দিক থেকে ও দিকে যাচ্ছে একটি বাচ্চা ছেলে। পরনে সবুজ ফুলহাতা সোয়েটার ও খাকি হাফ প্যান্ট। যান নিয়ন্ত্রণ করতে করতে অনেক ক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছিলেন বালি ট্র্যাফিকের এক কনস্টেবল। সন্দেহ হতেই ওই বালককে তিনি নিয়ে আসেন বালি ট্র্যাফিক গার্ডে।
কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ট্র্যাফিকের আই সি ওই বালকের পরিচয় জানতে চাইলে সে শুধুই বলতে থাকে, ‘‘এক জন মুখ আর চোখ বেঁধে গায়ে ইঞ্জেকেশন ফুটিয়ে বিহার থেকে নিয়ে এসেছে’’। কিন্তু বিহারে তার গ্রামের নাম বা কারও ফোন নম্বর বলতে পারছিল না ছেলেটি। অগত্যা বালি থানার হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। এর পরে থানার ‘খেলা ঘর’-এ (থানায় আসা শিশুদের বিনোদনের জন্য ঘর) বসিয়ে তার পরিচয় জানার চেষ্টা শুরু করেন পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু তখনও ওই একই কথা বারবার বলতে থাকে সে। অনেক চেষ্টার পরে পুলিশ কর্মীরা জানতে পারেন ছেলেটির নাম পঙ্কজ যাদব।
শনিবার সারা দিন টালবাহানা চলার পরে ওই দিন রাতেই জানা যায় বাবার উপর অভিমান করেই অপহরণের গল্প ফেঁদেছিল লিলুয়ার বামুনগাছির বাসিন্দা পঙ্কজ। শনিবার রাতেই তাকে বাবা-মার হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই দিন সকাল ৭টা নাগাদ বাড়ির সামনে থেকেই উধাও হয়ে যায় সে। শনিবার সন্ধ্যায় মালিপাঁচঘড়া থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করেছিলেন তার বাবা, পেশায় গাড়ি চালক শঙ্কর যাদব।
দশ বছরের বালককে নিয়ে কি চলল সারা দিন? বিহারের কোথায় সে থাকে? তার গ্রামের নাম, স্কুলের নাম জিজ্ঞাসা করলেও বারবার অপহরণের কথাই বলছিল পঙ্কজ। শেষে পুলিশের আয়োজিত একটি ফুটবল ম্যাচে ওই বালককে সঙ্গে করে নিয়ে যান বালি থানার আই সি। খেলা দেখতে দেখতেই পঙ্কজকে তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শুরু করেন। জানা যায়, তার বাবার নাম শঙ্কর যাদব। জেলার নাম নওয়াদা। কিন্তু সে আর যা তথ্য দিচ্ছিল, কোনওটারই অস্তিত্ব মিলছিল না। শেষে স্থানীয় দুই যুবকের সাহায্য নেন আই সি। ওই যুবকেরাও কথা বলেন পঙ্কজের সঙ্গে। শেষে এক যুবক তাঁর এক পরিচিতের মাধ্যমে নওয়াদার বাসিন্দা যশবন্ত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানান।
পুলিশ জানায়, এর পরেই ঘটনার মোড় ঘুরতে শুরু করে। যশবন্ত ফোনে কথা বলেন পঙ্কজের সঙ্গে। তাতেই জানা যায় সে বিহারের নওয়াদা জেলার শ্রীদল্লা থানার রাজৌলি-র আমোদি গ্রামের কথা বলছে। বালি থানা থেকে যোগাযোগ করা হয় সেই থানায়। পাশাপাশি পঙ্কজের ছবি হোয়াট্সঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয় যশবন্তকে। সেই ছবি নিয়ে আমোদি গ্রামে খোঁজ শুরু হয়।
দুপুরে জানা যায়, পঙ্কজের কাকা আমোদি গ্রামে থাকলেও তারা হাওড়াতে থাকে। বিকেলে পঙ্কজের কাকাকে বিষয়টি জানান যশবন্ত। সেখান থেকেই শঙ্কর জানতে পারেন ছেলের খবর। তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়ের থেকে বালির এক জনের নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করতেই পঙ্কজের খোঁজ পাই। তিনিই থানায় নিয়ে যান।’’
এ দিকে রাতে মালিপাঁচঘড়া থানা থেকে সমস্ত থানায় শিশু নিখোঁজের তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বালি থানা তা জানতে পেরে ব্যবস্থা নিতে শুরু করতেই থানায় হাজির হন শঙ্কর। ছেলেকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। আর অভিমানের সুরে পঙ্কজ বলে, ‘‘তুমি আবার মারলে এ বার বিহারই চলে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy