Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গাড়িতে আগুন দিচ্ছে কারা, খুঁজছে পুলিশ

সরকারি সূত্রের খবর, এমন সন্দেহের বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছে না নবান্নও। সে জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিশদে খোঁজখবর শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের একাংশ জানায়, পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় গাড়ি নিয়ে তদন্তে গিয়েও সমস্যা পড়ছে পুলিশ।

ভাঙচুর: দার্জিলিঙের চকবাজারে ভাঙচুর পুলিশের গাড়ি। ছবি: প্রতিভা গিরি।

ভাঙচুর: দার্জিলিঙের চকবাজারে ভাঙচুর পুলিশের গাড়ি। ছবি: প্রতিভা গিরি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

বসিরহাট থেকে দার্জিলিং, প্রেক্ষাপট বা দাবি-দাওয়া আলাদা হলেও বিনা বাধায় হিংসা চালানোর ছকটা কিন্তু এক।

প্রতিপক্ষের উপরে হামলার সময়ে যাতে পুলিশ পৌঁছতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করাই প্রথম লক্ষ্য। দ্বিতীয়ত, গাড়ি ভেঙে-পুড়িয়ে কয়েক জন পুলিশ অফিসার-কর্মীকে যদি জখম করে দেওয়া যায়, তা হলে তারা ভয় পেয়ে যাবে। তখন দুষ্কৃতীদের পোয়া বারো। তাই আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হলেও রাজ্যের সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনাবলী কোনও কোনও ক্ষেত্রে একই সুতোয় বাধা থাকতেও পারে, মনে করছে পুলিশের একাংশ। এমনকী, পিছনে কোনও ‘পাকা মাথা’ আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে তদন্তের দাবিও উঠেছে।

আরও পড়ুন: তপ্ত পাহাড়ে আবার মৃত্যু ৪ জনের, কথা চাইলেন মমতা

সরকারি সূত্রের খবর, এমন সন্দেহের বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছে না নবান্নও। সে জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিশদে খোঁজখবর শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের একাংশ জানায়, পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় গাড়ি নিয়ে তদন্তে গিয়েও সমস্যা পড়ছে পুলিশ। গাড়ি রেখে গ্রামে ঢুকলে চালককে হটিয়ে তাতে আগুন ধরানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগাম খবর হামলাকারীদের কাছে কী ভাবে পৌঁছচ্ছে, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

যে সব জায়গায় গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, সেখানে নতুন গাড়ি পাঠানো এবং পাহাড়ে পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, গোলমালের সময়ে পুলিশের গাড়ি পোড়ানো নতুন ঘটনা নয়। তবে ইদানীং পাহাড়-সমতলে এই ঘটনা খুবই বেড়ে গিয়েছে। গত এক মাসে পাহাড়ে পোড়ানো হয়েছে ২১টি গাড়ি। এই সময়ে সমতলে পুড়েছে ১৪টি পুলিশের গাড়ি। অর্থাৎ ৩০ দিনে ৩৫টি। গড়ে দিনে একটির বেশি গাড়িতে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর চালানো হয়েছে ৫০টিরও বেশি গাড়িতে। প্রতি ক্ষেত্রেই এর ধাক্কায় পুলিশের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বাড়তি সময় লেগেছে। ততক্ষণে হামলাকারীরা কাজ হাসিল করে পালিয়েছে।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ কিংবা জিএনএলএফের মুখপাত্র নীরজ জিম্বারা আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে জানিয়েছেন, পুলিশ নজরদারি, তল্লাশির নামে বাড়াবাড়ি করায় উত্তেজনা তৈরি হয়ে থাকে। তবে দু’দলের নেতাদের কয়েক জন একান্তে জানান, আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির সময়ে নানা ক্ষেত্রের পেশাদার, অবসরপ্রাপ্তরা ‘আবেগতাড়িত’ হয়েও পরামর্শ দেন।

ফের ধুন্ধুমার

• শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা: সোনাদায় জিএনএলএফের বিক্ষোভ। পুলিশকে কোপ।
জিএনএলের অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে ১ জনের মৃত্যু।

• রাত ১১টা: দেহ নিয়ে বিক্ষোভ। পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে ঢিল।

• শনিবার সকাল ১০টা: সোনাদায় জিএনএলএফের বিক্ষোভ।
সোনাদা স্টেশনে আগুন। থানায় ঢিল।

• সকাল সাড়ে ১০টা: দার্জিলিঙের চকবাজারে মোর্চার জমায়েত।

• দুপুর ১২টা: দার্জিলিং সদর থানার সামনে মোর্চার বিক্ষোভ।
টাউন ডিএসপি অফিসে ভাঙচুর।

• সাড়ে ১২টা: খাদ্য দফতরের অফিসে ভাঙচুর, আগুন।
মোর্চার দাবি, পুলিশের গুলিতে তিন জনের মৃত্যু।

• বিকেল ৪টা: গরুবাথান রেঞ্জ অফিসে আগুন।

• বিকেল সাড়ে ৫টা: নেওড়া রেঞ্জ অফিসে আগুন।

• সন্ধ্যা ৬টা: মিরিকের থরবু চা বাগান লাগোয়া চেকপোস্টে আগুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE