নিহত নাসির হালদারের শোকার্ত ছেলে-মেয়ে। বুধবার আমডাঙায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ
গ্রামের আনাচ-কানাচ থেকে ভেসে আসছে মহিলাদের একটানা কান্নার সুর। পুরুষেরা সবাই বাড়িছাড়া। পথে পা ফেলতে হচ্ছে সাবধানে, পাছে বোমায় পা পড়ে! জায়গায় জায়গায় গুলির খোল, বোমার সুতলি প়ড়ে। মাটির দেওয়ালে টাটকা রক্তের দাগ। বুধবার সকালে এমনই চিত্র ছিল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার বইচগাছির।
মঙ্গলবার সন্ধের এই এলাকাতেই বোমা-গুলির লড়াই চলেছে কয়েক ঘণ্টা ধরে। আতঙ্কিত মহিলার বলছেন, শুধু বোমাই পড়েছে হাজারখানেক। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চলে আক্রমণ। বুধবার পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন বানচাল করতেই হামলা চালিয়েছে শাসক শিবির, অভিযোগ বিরোধীদের। পাল্টা অভিযোগ জানাচ্ছে তৃণমূল। প্রাণ গিয়েছে ৩ জনের। পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম নাসির হালদার (৩৩), কুদ্দুস গনি (৪৬), মোজাফ্ফর আহমেদ (৪০)। প্রথম দু’জন তাঁদের দলের কর্মী বলে জানিয়েছে তৃণমূল। অন্য জন সিপিএমের। সংঘর্ষে জখম দু’পক্ষের দশ জন ভর্তি বারাসত জেলা হাসপাতাল ও আরজিকরে। ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিন মৃত কর্মীদের দেহ নিয়ে গ্রামে যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ৬ সেপ্টেম্বর এলাকায় মিছিল ও সভা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেকে খুন হয়েছেন। অনেকে খুন-সন্ত্রাস নিয়ে রাজনীতি করছে। মার্কেটিং করছে। আমরা ঠেকানোর চেষ্টা করছি। খুন-সন্ত্রাস কোনও কোনও দলের কাছে এখন মডেল। অসুস্থ রাজনীতি চলছে। পরিকল্পনা করে করা হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘দুষ্কৃতী-পুলিশ-তৃণমূল মিলে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত করার জন্য সরকারের মদতে সন্ত্রাস চলছে।’’
আমডাঙায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। নৌকোয় বস্তা-ভর্তি বোমা ও মশলা উদ্ধার হয়। আইজি দক্ষিণবঙ্গ নীরজ সিংহ বলেন, ‘‘এলাকায় কিছু বোমা তৈরি হয়েছিল।’’ তা বলে এত অস্ত্রশস্ত্র মজুত হল, আঁচ করতে পারল না পুলিশ? উঠছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আমডাঙার ওসি মানস দাসকে। আইজি বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
দুই চিত্র: এক বৃদ্ধার বাড়িতে পড়ে রয়েছে ফাটা এবং না-ফাটা বোমা। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ভোটে ত্রিশঙ্কু হয়েছিল তারাবেড়িয়া, বোদাই, বইচা পঞ্চায়েত। তারাবেড়িয়ায় তৃণমূল বিরোধী জয়ী সদস্যেরা একজোট হয়ে সুষ্ঠু ভাবে বোর্ড গঠনের দাবিতে হাইকোর্টে যান। মঙ্গলবার হাইকোর্ট পুলিশকে নির্দেশ দেয়, তারাবেড়িয়ায় বোর্ড গঠনে বিরোধীদের সমস্ত নিরাপত্তা দিতে হবে। সেই নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় লড়াই। বুধবার বোর্ড গঠন স্থগিত ছিল তিনটি পঞ্চায়েতেই।
আরও পড়ুন: নির্বাচন এলেই রক্তে ভেসে যায় আমডাঙা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy