Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
RSS

আরএসএস শ’খানেক স্টল বাড়াল পুজোর বাংলায়, দোকান গুনে লাভ নেই, বলছে তৃণমূল

মহানগর থেকে মফস্‌সল, পুজো কমিটিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লড়াইয়ে সর্বত্রই বিরোধীদের চেয়ে যোজন এগিয়ে তৃণমূল। এ বার বিজেপি কিছুটা হলেও দাঁত ফোটানোর চেষ্টা করেছে সে পরিসরে। কিন্তু বাম-কংগ্রেস সে লড়াইয়ে প্রায় ঢুকতেই পারেনি।

অলংকরণ: তিয়াসা দাস।

অলংকরণ: তিয়াসা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:১৭
Share: Save:

উপরে উপরে ছুটির মেজাজ। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ যতটা বেড়েছিল গত এক মাসে, তার আঁচটা ঝপ করে নেমে গিয়েছে দেবীপক্ষ শুরু হতেই। কিন্তু রাজনীতির লড়াইটা থেমে রয়েছে ভাবলে খুব ভুল হবে। পুজোকে ঘিরেও চলছে জমি দখলের টানটান লড়াই। তবে লড়াইটা চোরাস্রোতের মতো।

মহানগর থেকে মফস্‌সল, পুজো কমিটিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লড়াইয়ে সর্বত্রই বিরোধীদের চেয়ে যোজন এগিয়ে তৃণমূল। এ বার বিজেপি কিছুটা হলেও দাঁত ফোটানোর চেষ্টা করেছে সে পরিসরে। কিন্তু বাম-কংগ্রেস সে লড়াইয়ে প্রায় ঢুকতেই পারেনি।

পুজোর সময়ে জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য বামেদের চিরাচরিত অস্ত্র অবশ্য বুক স্টল। পুজো প্রাঙ্গণে বা জনসমাগমের জায়গায় বইয়ের দোকান খুলে পুজোর ভিড়ের সামনে বরাবর নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করে এসেছেন বামেরা। গত কয়েক বছর ধরে স্টলের সংখ্যা ক্রমশ কমছিল। কিন্তু ভোটের দিকে তাকিয়েই হোক বা নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার তাগিদে, এ বার সংখ্যাটা খানিকটা বাড়িয়েছে সিপিএম। পুজোর বাংলায় মোট কত স্টল খোলা হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা সিপিএম জানাচ্ছে না। তবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর, কলকাতায় ১০৫টা বুক স্টল খোলা হয়েছে। আর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলছেন, ‘‘গোটা রাজ্যে আমাদের স্টলের সংখ্যা প্রায় হাজার।’’ অর্থাৎ কলকাতার বাইরে ৯০০-র কাছাকাছি। গত বছরের চেয়ে সিপিএমের স্টলের সংখ্যা এ বার সামান্য হলেও বেড়েছে।

আরএসএস-বিজেপি কিন্তু অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছে বুক স্টলের সংখ্যা। আরএসএস-এর দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের প্রধান জিষ্ণু বসু বললেন, ‘‘কলকাতায় ৭৭টা স্টলের জন্য আবেদন এসেছিল। শেষ পর্যন্ত ৭৩টা স্টল খোলা হয়েছে। আর জেলাগুলোয় প্রায় সাড়ে ছ’শোর মতো স্টল আমরা খুলেছি।’’ গত বছরের পুজোয় এই সংখ্যাটা কেমন ছিল? জিষ্ণু জানালেন, কলকাতায় গত বছর ৫৫টা বুক স্টল খোলা হয়েছিল। অর্থাৎ এ বার এক ধাক্কায় ১৮টা বেড়েছে। আর জেলাগুলোয় বেড়েছে ১০০-র কাছাকাছি।

আরএসএসের দেওয়া এই হিসেব থেকে বোঝা যাচ্ছে, স্টলের মোট সংখ্যায় সিপিএম-ই এগিয়ে। কিন্তু স্টলের সংখ্যাবৃদ্ধির দৌড়ে সঙ্ঘ অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে রাজ্যের পূর্বতন শাসক দলকে।

আরও পড়ুন- #মিটু বিতর্ক: মানহানির মামলা ঠুকলেন আকবর​

আরও পড়ুন- শবরীমালায় প্রবেশের ইচ্ছা ফেসবুকে জানাতেই বিক্ষোভের মুখে কেরলের মহিলা​

আরএসএসের বুক স্টলগুলির পাশাপাশি বিজেপি-ও কিন্তু স্টল খুলেছে অনেক জায়গায়। ৬, মুরলীধর সেন লেন সূত্রের খবর, গোটা রাজ্যে পুজোকে কেন্দ্র করে বিজেপির বুক স্টলের সংখ্যা এ বার শ’পাঁচেক। তবে আরএসএস জানাচ্ছে, সর্বত্র যে বিজেপি এবং আরএসএস আলাদা আলাদা স্টল খুলেছে, তা নয়। কোথাও কোথাও যৌথ উদ্যোগও রয়েছে।

সঙ্ঘ এবং বিজেপির স্টলের সংখ্যা মেলালে বামেদের চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে বিজেপি শুধু স্টলে সীমাবদ্ধ নেই। কলকাতায় এবং জেলায় জেলায় বেশ কিছু পুজোর নিয়ন্ত্রণও এ বার বিজেপির হাতে। পঞ্চমী পর্যন্ত গোটা চল্লিশেক পুজোর উদ্বোধন বিজেপি নেতাদের হাতে হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন দলের মুখপাত্র সায়ন্তন বসু। মহাষষ্ঠীতে আরও কয়েকটার উদ্বোধন করছেন বিজেপি নেতারা।

এ তো গেল বিরোধীদের কথা। দুর্গোৎসবকে ঘিরে তৃণমূলের সক্রিয়তা ঠিক কেমন? প্রতি বছর যেমন থাকে তেমনই। কলকাতার প্রায় সব নামী তথা বিগ বাজেট পুজোই কোনও না কোনও তৃণমূল নেতা বা মন্ত্রীর ছত্রছায়ায়। জেলাগুলোতেও বড় পুজোগুলোর নিয়ন্ত্রণ গত কয়েক বছরে নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তবে বুক স্টল বা ‘জাগো বাংলা’র স্টল খোলার বিষয়ে তৃণমূলের উৎসাহ ঈষৎ কম। পুজোর কলকাতায় বা মফস্‌সলে তৃণমূলের বুক স্টল একেবারেই চোখে পড়ছে না, তা নয়। ভাল সংখ্যাতেই চোখে পড়ছে। কিন্তু দলের তরফে জনসংযোগের বিষয়টা দেখভাল করেন যাঁরা, তাঁদের একজন বললেন, ‘‘যে সংখ্যক স্টল আমরা খুলেছি, চাইলে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি স্টল খোলা আমাদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু বুক স্টল খুলে জনসংযোগ করার প্রয়োজন আমাদের পড়ে না। সিংহ ভাগ পুজোর উদ্যোক্তাই আমাদের দলের নেতারা। আর সেটা জনসাধারণ জানেনও। তাই আলাদা করে বুক স্টল খুলে অস্তিত্ব জাহির করার দরকার আমাদের পড়ে না।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পুজোয় বুক স্টল খোলার অর্থ হল বই বিক্রির মাধ্যমে দলের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ পুজো প্রাঙ্গণে তো আমরা সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। তাই বুক স্টল গোনার প্রয়োজন নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RSS Book Stall Jago Bangla আরএসএস
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE