Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘নাড়া’য় আগুন রাজ্যেও, ক্ষতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

আবাদ শেষে ‘নাড়া’ পুড়িয়ে জমি সাফ করার অভ্যাস চাষিদের ছিলই। এখন ধান কাটায় যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও তা তো বন্ধ হলই না, উল্টে বাড়ল! 

দূষণ: জ্বলছে নাড়া। ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। সিঙ্গুরে। ছবি: দীপঙ্কর দে।

দূষণ: জ্বলছে নাড়া। ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। সিঙ্গুরে। ছবি: দীপঙ্কর দে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

আবাদ শেষে ‘নাড়া’ পুড়িয়ে জমি সাফ করার অভ্যাস চাষিদের ছিলই। এখন ধান কাটায় যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও তা তো বন্ধ হলই না, উল্টে বাড়ল!

দিল্লি-হরিয়ানায় চাষিদের ওই প্রবণতা নিয়ে পরিবেশবিদরা সরব হয়েছেন। একই ছবি এখন এ রাজ্যেও। হুগলির সিঙ্গুর থেকে বর্ধমানের পালসিট পর্যন্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারের জমিতে এখন প্রায় রোজই দেখা যাচ্ছে ‘নাড়া’ (পাকা ধান গাছের গোড়া) এবং খড় পোড়ানোর দৃশ্য। অন্য জেলাগুলিতেও ছড়িয়েছে ওই প্রবণতা। ধোঁয়ায় ঢাকছে আকাশ। ছাই পড়ছে জমিতেই।

কৃষি দফতরের বক্তব্য, বহু জায়গাতেই এখন বীজ বোনা থেকে ধান কাটা— সব হচ্ছে ‘কম্বাইন হারভেস্টার’ যন্ত্রে। চাষিদের দাবি, যন্ত্রে ধান কাটার পরে অপেক্ষাকৃত বড় গোড়া পড়ে থাকছে জমিতে। ধান ঝাড়ার পরে প্রচুর টুকরো খড়ও পড়ে থাকছে। তা সাফ করার লোক মিলছে না। তাই জমিতেই আগুন দিতে হচ্ছে।

জমিতে ‘নাড়া’ পোড়ালে কী হয়?

‘জাতীয় গ্রামীণ জীবন-জীবিকা মিশন’-এর জাতীয় পরামর্শদাতা, কৃষি-বিজ্ঞানী কাঞ্চন ভৌমিক বলেন, ‘‘এতে কার্বন ডাই এবং মনো-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে। এ ছাড়া শস্য বিশেষে সালফারঘটিত যৌগ নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটায়।’’ চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী, কীটতত্ত্ববিদ সীতেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এতে জমিতে থাকা অনেক উপকারী পোকা, জীবাণু এবং কেঁচো মারা যায়। ফলে, পরবর্তী ফসলের উৎপাদন কম হয়।’’ প্রচারে নেমে একই কথা বলছে কৃষি দফতরও। কৃষিকর্তাদের দাবি, আগুনের প্রভাবে জমি ক্রমশ বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এতে পরিবেশ ভীষণ ভাবে দূষিত হয়। বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত দফতরকে চিঠি দিয়েছি। এখনই ওই প্রবণতা আটকানো দরকার।’’

যদিও ‘নাড়া’ পোড়ানো নিয়ে চাষিদের একটা বড় অংশ ভিন্ন মত পোষণ করেন। প্রবীণ চাষিদের অনেকেই মনে করেন, এতে কোনও ক্ষতি হয় না। নবদ্বীপের নিদয়ার অসিত ঘোষের কথায়, “এতে জমিতে সার বাড়ে। আগে তো পোকামাকড় মারতে আগুন দেওয়াই রীতি ছিল। আমাদের বাপ-দাদারাও তা-ই করেছেন।” যদিও কৃষিবিজ্ঞানীরা এই মত খারিজ করে দিয়েছেন।

বিকল্প কী?

কৃষি-আধিকারিকদের বক্তব্য, খড় কুঁচিয়ে বা পচিয়ে সার হিসেবে জমিতে মেশানো, গবাদি পশুর খাদ্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। ‘স্ট্র-ব্যালার’ নামে আর একটি যন্ত্রও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেটির কাজ জমিতে ধানের যে গোড়া এবং মাটির উপর ইঞ্চি দশেকের অংশ থেকে যায়, সেগুলি কেটে শক্ত বলের আকৃতিতে পরিণত করা। এগুলি গবাদি পশুর খাবার হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE