শোচনীয়: এ ভাবেই যাতায়াত । (বাঁ দিকে) নৈহাটির রামঘাট ও (ডান দিকে) শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভ ঘাটের। নিজস্ব চিত্র
বাঁশের সাঁকোটা ফুট কয়েক গিয়েই ফুরিয়ে গিয়েছে।
এর পরেই বেশ বদলের পালা। পায়ের চপ্পল উঠে আসবে হাতে। প্যান্ট গুটিয়ে উঠবে হাঁটুর উপরে। লজ্জার মাথা খেয়ে তুলতে হবে শাড়ি-ধুতি। জল কম, পাঁকই বেশি।
দুর্ভোগের শেষ নেই। নৈহাটির গরিফায় রামঘাটে ওপারে হুগলি ঘাট। দু’বেলা যে ঘাটের পারাপার করতে তিতিবিরক্ত যাত্রীরা। ঘাট-লাগোয়া শ্মশান। স্নান, প্রতিমা বিসর্জন সবই এখানে। সে সব জায়গায় সৌন্দর্যায়ন হলেও স্নান করার ব্যবস্থা বা ফেরি পারাপারের অবস্থা থেকে গিয়েছে সাবেক দুর্গতির পর্যায়েই।
অপর দিকে শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভ ঘাটেও যাতায়াত করতে হয় এ ভাবেই। গত রবিবার মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে আসছিলেন ঝাড়গ্রামের বিষ্ণুমোহন মল্লিক। ট্রেনে টিটাগড়ে নেমে গঙ্গায় ভুটভুটি চেপে রাধাবল্লভ ঘাটে পৌঁছতেই বিপত্তি। নড়বড়ে সেতুতে পা হড়কে পড়লেন বৃদ্ধ। ডান কাঁধের হাড়ে চিড় ধরল। এতদিন এ নিয়ে অভিযোগ ছিলই। তবে বুধবার তেলেনিপাড়ার ঘটনার পরে ভয়টা এখন আঁকড়ে বসেছে নিত্যযাত্রীদের মনে।
নৈহাটিতে ঘোষপাড়া রোড থেকে ৪ নম্বর পুলের আগের পিচ রাস্তা এসে শেষ হয়েছে গঙ্গার ঘাটে। এই ঘাটে ফেরি পারাপারের বয়স অন্তত সাত দশক। আলাদা করে জেটি নেই। বাঁশ আর কাঠের সরু সাঁকোই ভরসা। সাঁকোর উপর দিয়ে জোয়ারের জল বয়ে যায়। ভাটার সময়ে কাদায় লুটোপুটি খেতে হয় যাত্রীদের। সারা দিনে দু’টো নৌকো কখনও চলে, কখনও বা চলে না। তবে জোয়ার-ভাটায় পারাপার বন্ধ। তুফান উঠলেও সেটাই দস্তুর। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘ঘাটের চারপাশের পরিবেশ এখন অনেক সুন্দর। আগে ওই ঘাটে সন্ধ্যায় যাওয়াটাই ভয়ের ছিল। এখনও কিছু সমস্যা আছে। দেখছি, কত দ্রুত সমাধান করা যায়।’’
শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভ ঘাট নিয়েও একই অভিযোগ। সেখানেও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বালাই নেই। শহরের যুগল আঢ্য ফেরিঘাটে ভাসমান জেটি রয়েছে। এই ঘাটে নেই। তার বদলে আছে প্রায় ছ’শো ফুট দীর্ঘ বাঁশের সেতু। সেতুর কোথায় ভুটভুটি দাঁড়াবে, নির্ভর করে জলের বাড়া-কমার উপরে। জল কম থাকলে সেতুর শেষ পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, জল বাড়লে সেতুর অনেকটা অংশ জলের তলায় থাকে। তার উপরে আবার ধরার কোনও জায়গা নেই।
পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় জানান, শহরের তিনটি ঘাটের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব গিয়েছিল। সরকার শুধু যুগল আঢ্য ফেরি ঘাটের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। ১০ লক্ষ টাকা মিলেছে। তবে কি রাধাবল্লভ ঘাটে ঝুঁকি নিয়েই চলবে পারাপার? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘ইজারাদারকে নির্দেশ দেওয়া আছে, চূড়ান্ত সতর্কতা নিয়ে পারাপার করানোর জন্য। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, তেলেনিপাড়ার ঘটনার পরেই ইজারদারকে ফের সতর্ক করা হয়েছে। বিকেল থেকেই নষ্ট হয়ে যাওয়া সেতুর বাঁশ বদলাতেও শুরু করেছেন ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঘাটের ইজারাদার রাজশ্রী ঘোষ বলেন, ‘‘ঠাকুরের বড় কাঠামো বা কচুরিপানা ভেসে এসে সেতুর কাঠামো ভেঙে দেয়। তাই বাঁশের রেলিং করা যায় না। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়া বাঁশ নিয়মিত বদলানো হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy