ফাইল চিত্র
কয়েক মাস আগে খেতভরা আলু দেখে হাসি ফুটেছিল তারকেশ্বরের রামনগরের চাষি গোবিন্দ ঘোষের মুখে। এখন হাসি ম্লান। হিমঘরে তাঁর ৪০০ বস্তা আলু পড়ে। বিক্রি হচ্ছে না।
আলু বেচলেও ধনেখালির কাশীনাথ পাত্র বলছেন, ‘‘কম দামে আলু বেচতে হল। বিঘাপ্রতি দশ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। কৃষিঋণ শোধ করতে পারিনি।’’ আরামবাগের এক আলুচাষি রবিবারই আত্মঘাতী হন। তাঁর পরিবারের দাবি, আলুর দাম না-মেলাতেই তিনি আত্মহত্যা করেন।
এ ছবি শুধু হুগলির নয়। বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ আলু উৎপাদক সব জেলাতেই দাম না-মেলায় চাষিরা সঙ্কটে। রাজ্যের ৪৪০টি হিমঘরে এখনও গত মরসুমের অন্তত ১৪-১৫ লক্ষ টন আলু রয়েছে। চাষিরা জানান, আলু চাষে বিঘাপ্রতি কমবেশি ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ভাল ফলন হলে বিঘায় ৮০ বস্তা (৫০ কেজিতে এক বস্তা) পর্যন্ত আলু হয়। অর্থাৎ লাভ করতে হলে বস্তাপ্রতি আলু বিক্রি করতে হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। কিন্তু এ বার তাঁরা বেচছেন ১৫০-২০০ টাকায়। ফলে বিঘাপ্রতি ক্ষতির পরিমাণ অন্তত দশ হাজার টাকা।
কিন্তু কেন আলুর দর তলানিতে?
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে খবর, বাড়তি ফলনের জেরেই আলুর এই মন্দা বাজার। ক’মাস ধরেই জ্যোতি আলু বিকোচ্ছে ৮-৯ টাকা কেজি দরে। চন্দ্রমুখী ১৫-১৬ টাকা কেজি। মাসখানেক আগে সব আনাজের দাম আকাশ ছুঁলেও আলুর দাম বাড়েনি। চাষিরা যে পরিমাণ আলু ওড়িশা, অসম, উত্তরপ্রদেশ বা পঞ্জাবে রফতানি করা যাবে ভেবেছিলেন, তা-ও হয়নি। ওই সব রাজ্যেও গত মরসুমে আলুর ভাল ফলন হয়েছে।
পরিস্থিতি সামলাতে হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করেছে রাজ্য। কৃষি বিপণন দফতর জানিয়েছে, বর্ধিত সময়সীমার প্রথম দু’সপ্তাহ হিমঘরে আলু রাখার ভাড়া লাগবে না। পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য ভাড়া লাগবে। কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘চাষিদের স্বার্থেই সময়সীমা বাড়ানো হল। আশা করছি, হিমঘরের সব আলু বেরিয়ে যাবে।’’ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় মনে করছেন হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা বাড়ায় লাভবান হবেন চাষিরা। তিনি বলেন, ‘‘এখন ভিন্ রাজ্যে অল্প হলেও আলু যাচ্ছে। হিমঘরের আলু শেষ হয়ে যাবে।’’
তবু চাষিদের ক্ষতির বোঝা কতটা লাঘব হবে, সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আবহাওয়ার কারণে আগামী মরসুমের আলু চাষ এখনও শুরুই করতে পারেননি অনেকে। কৃষি দফতর প্রচার করছে, চাষে লাভ পেতে আলু আর ধানের চৌহদ্দি ছেড়ে বেরোতে হবে। প্রথাগত চাষ ছেড়ে বিকল্প চাষে মন দিতে হবে। সে জন্য অর্থ সহায়তাও দেবে সরকার। কিন্তু চাষিরা এখনও সেই বিঘের পর বিঘে জমিতে আলু চাষেই আটকে রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy