Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিমানকে দেখে ফুঁসে উঠলেন সোমনাথের ছেলে, মেয়ে মুগ্ধ মমতায়

লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার এবং ১০ বারের প্রাক্তন সাংসদের প্রয়াণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনা বিতর্কের রেশ রেখে গেল শেষ যাত্রায়। বাবার পুরনো দলের বর্ষীয়ান পলিটব্যুরো সদস্যকে ছেলে যখন চলে যেতে বলছেন, সে দিনই আবার ভিন্ন দলের মানুষ হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারে মুগ্ধতা জানালেন সোমনাথ-কন্যা অনুশালী বসু।

 প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়।

প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়ির এক তলায় তাঁর প্রিয় স্টাডিতে এক চিলতে জায়গা করে রাখা হয়েছে বডি ফ্রিজার। তার মধ্যে শায়িত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সাংসদ মহম্মদ সেলিম, পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে বিমান বসুকে ঘরে ঢুকতে দেখেই ফুঁসে উঠলেন প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়। বাবার মরদেহের পাশ থেকেই বিমানবাবুর উদ্দেশে বলতে থাকলেন, কেন এসেছেন? বাবাকে তাড়িয়েছেন। সারা জীবন শুষে খেয়েছেন! কে আসতে বলেছে এখানে? ঘরভর্তি লোকের মাঝে এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত বিমানবাবুকে সেখান থেকে বার করে নিয়ে গেলেন তাঁর দলীয় সতীর্থেরা।

লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার এবং ১০ বারের প্রাক্তন সাংসদের প্রয়াণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনা বিতর্কের রেশ রেখে গেল শেষ যাত্রায়। বাবার পুরনো দলের বর্ষীয়ান পলিটব্যুরো সদস্যকে ছেলে যখন চলে যেতে বলছেন, সে দিনই আবার ভিন্ন দলের মানুষ হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারে মুগ্ধতা জানালেন সোমনাথ-কন্যা অনুশালী বসু। বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্য মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে সোমবার দুপুরে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানোর পরে অনুশীলার উপলব্ধি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানেন, কাকে কী ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। উনি সব সময়েই বাবার খোঁজ নিতেন। ওঁর মনে বাবার জন্য আলাদা স্থান ছিল সব সময়েই।’’ আর মমতাও সেই ১৯৮৪ সালের লোকসভা ভোটে যাদবপুরে সোমনাথবাবুকে হারানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন, ‘‘লোকসভায় উনি আমাকে অনেক তিরস্কার করেছেন। সেটা রাজনীতির ব্যাপার। কিন্তু আজ দেখে কারও কী মনে হয়েছে, আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক পাঁচিল রয়েছে? এটাই সৌজন্য।’’

সোমনাথবাবুর বাড়ির মধ্যে ‘তিক্ততা’র পর্ব অবশ্য এক দফাতেই শেষ হয়নি। প্রথম বার প্রতাপবাবুর মন্তব্যের জেরে বেরিয়ে এলেও পরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে সঙ্গে নিয়ে ফের আসেন বিমানবাবু। তখনও একই ব্যবহার করেন প্রতাপবাবু। বিমানবাবু অবশ্য সোমনাথবাবুর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে উপরে উঠে যান। কিছু ক্ষণ পরে তিনি নামতেই প্রতাপবাবু সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলে বসেন, ‘‘ইয়েচুরি স্বাগত। কিন্তু উনি নন। লুকিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকেছেন। কিন্তু তৃণমূলের থেকে লুকোতে পারবেন না!’’ সকলেই আবার হতচকিত!

দেখুন ভিডিয়ো

বাইরে বেরিয়ে বিমানবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘বাবাকে হারিয়ে ওঁর মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। সোমনাথদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক বহু বছরের। আমি এসেছিলাম বৌদির কাছে। তিনি হাতটা ধরেই কথা বলেছেন।’’ আর ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘এখন এই নিয়ে বিতর্কের সময় নয়। বরং, সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সোমনাথদার লড়াইয়ের কথা মনে করার সময়।’’

আরও পড়ুন: দ্বিধাথরথর সিপিএম, ৫ ঘণ্টা পর এল শোকবার্তা

আরও পড়ুন: হিন্দু মহাসভার নেতার ছেলে যোগ দিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টিতে

মরদেহ লাল পতাকায় মুড়ে দিতে বা আলিমুদ্দিনে নিয়ে যেতেও আপত্তি ছিল না বিমানবাবুদের। কিন্তু পরিবারের তরফে অনুশীলা বলেন, ‘‘পার্টি অফিসে নিয়ে গেলে বাবা হয়তো খুশি হতেন। কিন্তু কষ্টের দিনগুলো মনে রেখে আমরা রাজি হইনি।’’ রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অর্জুন লাল মেঘওয়াল।

আরও পড়ুন: সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE