Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নীতি চান চিকিৎসকেরা

ব্যয়-বিক্ষোভ ঘিরে অঙ্গদানে কাটল তাল 

১০ জুলাই দুপুরে মেমারির বামনপাড়ায় লরির ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক থেকে পড়ে মাথায় চোট পান চিন্ময় ঘোষ। সে-দিন বিকেলের মধ্যেই তাঁকে মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয়।

চিন্ময় ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

চিন্ময় ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০৪:০০
Share: Save:

বাইক-দুর্ঘটনায় ৩৪ বছরের যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। সেই ক্ষতে মলমের কাজ করেছিল প্রয়াত আত্মীয়কে বহুর মধ্যে বাঁচিয়ে রাখার আশ্বাস। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের খরচখরচা নিয়ে বিতর্কে মঙ্গলবার বিকেলে সেই স্বস্তির মুহূর্তেই কেটে গেল তাল।

১০ জুলাই দুপুরে মেমারির বামনপাড়ায় লরির ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক থেকে পড়ে মাথায় চোট পান চিন্ময় ঘোষ। সে-দিন বিকেলের মধ্যেই তাঁকে মিন্টো পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয়। সোমবার চিন্ময়ের মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে-ধরনের মুহূর্ত তৈরি হওয়া উচিত, পরবর্তী ঘটনাক্রম তেমনই ছিল। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। চিন্ময়ের হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি, কর্নিয়া এবং ত্বক সংরক্ষণে সক্রিয় হয়ে ওঠেন সরকারি হাসপাতালের অভিজ্ঞ সার্জেনরা।

মৃতের আত্মীয় অরুণাভ মিত্র জানান, চিন্ময়ের স্ত্রী এবং ১১ বছরের সন্তান রয়েছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কথাটা স্ত্রী মহাশ্বেতাদেবী এবং দাদা তন্ময় ঘোষকে কী ভাবে বোঝাবেন, তা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে সম্মতি পেতে দেরি হয়নি। চিন্ময়ের মা অমিতাদেবী প্রথমে আপত্তি করছিলেন। পরিবারের সকলে বোঝানোর পরে তিনিও রাজি হন। শিক্ষিকা স্ত্রী মহাশ্বেতাদেবী বলেন, ‘‘চিন্ময় প্রায় বলত, আমার কিছু হয়ে গেলে অঙ্গদান করে দিয়ো। এখন ও সকলের মাঝে বাঁচবে।’’

চিন্ময়ের হৃৎপিণ্ড কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডানকুনির এক যুবকের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। মেডিক্যালের কার্ডিয়োথোরাসিক বিভাগের প্রধান প্লাবন মুখোপাধ্যায় জানান, ডাইলেটেড কার্ডিয়ো-মায়াপ্যাথিতে আক্রান্ত ওই যুবক একটু হাঁটলেই শ্বাসকষ্টে ভোগেন। চিন্ময়ের একটি কিডনি পেয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোমিনপুরের এক তরুণী। অন্য কিডনি দেওয়া হয়েছে ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি এক আইপিএস অফিসারকে। এ দিন ওই হাসপাতালে আরও দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে। চিন্ময়ের চোখের মণি গিয়েছে শঙ্কর নেত্রালয়ে। ত্বক এসএসকেএমে সংরক্ষণ করা হয়েছে। চিন্ময়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন সব গ্রহীতার আত্মীয়েরা। সেই সঙ্গে আগামী দিনে নিজেরাও মরণের পরে বহুর মধ্যে বাঁচার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে চেয়েছেন। তার পরেই রোগীর পরিজনদের একাংশের আকস্মিক বিক্ষোভে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মৃতের আত্মীয় অরুণাভ বলেন, ‘‘তিন লক্ষ টাকার বেশি বিল হয়েছিল। আমরা ছাড়ের অনুরোধ জানালে ৪০ হাজার টাকা কমানো হয়। কিন্তু পরে দেখি, দু’টি খাতে কমালেও অন্য কিছু খাতে ৩৩ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।’’ অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ‘ডোনার মেনটেনেন্স কস্ট’ তাঁদের কাছ থেকেই নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

বেসরকারি হাসপাতালের সিইও সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘রোগীর আত্মীয়েরা ভুল বুঝেছেন। ৪০ হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে, ‘ডোনার মেনটেনেন্স কস্ট’-ও নেওয়া হয়নি। রোটোর চিকিৎসকদলের পরামর্শ মেনে মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরে মৃতের শরীর থেকে অঙ্গ তোলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের চিকিৎসকদের কোনও ভূমিকা নেই।’’ স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক জানান, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের খরচের টাকা রোটো দেবে বলে বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। আত্মীয়-পরিজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

‘বেঙ্গল অর্গ্যান ডোনেশন সোসাইটি’র চেয়ারপার্সন চিকিৎসক সৌরভ কোলে বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত বিতর্কে অঙ্গ প্রতিস্থাপন আন্দোলনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা কখনওই কাম্য নয়। ঠিক তথ্য জেনে কোনও অভিযোগ করা উচিত।’’ এই আবহেই প্রশ্ন উঠছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের খরচ কে দেবে? অঙ্গ প্রতিস্থাপন আন্দোলনে যুক্ত বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা বলছেন, এই বিষয়ে অবিলম্বে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিনিয়ম তৈরি করা দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE