এনজেপি-তে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ। নিজস্ব চিত্র
প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ রয়েছে। তাতে বাঁধা দরে ট্যাক্সিও পাওয়া যায়। কিন্তু নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা শিলিগুড়ি চত্বর পেরোনোর পরেই চালকের মর্জি বদলে যায়।
ধরুন, যাবেন গ্যাংটক কিন্তু গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল সেবকে। মাথা পিছু দু’শো, তিনশো টাকা করে নিয়ে গাড়িতে তোলা হল আরও দু’এক জনকে। তার পরে তিস্তাবাজার, চিত্রে, রংপোতেও দেখলেন আপনার গাড়িই দাঁড়াতে দাঁড়াতে আরও লোক তুলছে, নামাচ্ছে। দার্জিলিং যেতে হলেও একই সমস্যায় পড়তে হবে। শিলিগুড়িরই দার্জিলিং মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়বে গাড়ি। আরও লোক উঠবে। একই কাণ্ড চলবে কার্শিয়াং, সোনাদা পর্যন্ত।
সেখানেই শেষ নয়। প্রিপেড ট্যাক্সির যাওয়ার কথা পুরো গন্তব্য পর্যন্তই। কিন্তু এনজেপি থেকে কোনও শৈলশহরের হোটেল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বাঁধা দরে ভাড়া দিয়ে দেওয়ার পরেও চালক কিছু দূর গিয়ে বলতে পারেন, তিনি শহরে পৌঁছে দেবেন, কিন্তু হোটেল অব্দি যেতে অতিরিক্ত ভাড়া লাগবে। কেন এমন করেন চালকেরা? চালকদের যুক্তি, ৮ বছর ধরে ভাড়ার তালিকা সংশোধন করা হয়নি। কিন্তু তাতে পর্যটকদের হয়রানির কোনও সুরাহা হয় না।
চালকদের বক্তব্য, ৮ বছরে সব কিছুরই দাম বেড়েছে। অথচ এনজেপি-র প্রিপেড ট্যাক্সির বাঁধা দরের কোনও পরিবর্তন হয়নি। অথচ এখনও এই বুথে দার্জিলিং যাওয়ার দর শুরু হয়েছে ১৯০০ টাকা থেকে। ওই রাস্তার এক ভাড়ার গাড়ির চালকের বক্তব্য, ‘‘প্রিপেডে যা ভাড়া পাওয়া যায়, তাতে কিছুতেই কুলোয় না। তাই বাধ্য হয়েই আরও যাত্রী তুলতে হয়।’’ ট্যাক্সি চালকেরা জানান, প্রিপেডে যে দর ধরা রয়েছে, বাইরে তার থেকে প্রায় হাজার টাকা বেশি ভাড়া মেলে। তা হলে প্রিপেডের লাইনে দাঁড়ান কেন? এক চালকের বক্তব্য, ‘‘বেশির ভাগ যাত্রীই ওখানেই দাঁড়ান। তাই ওখান থেকে সহজে ভাড়া মেলে।’’
পর্যটনের জমজমাট মরসুমে এনজেপি এলাকায় দালালদেরও ভিড় যথেষ্ট। তারাই যাত্রীদের গাড়ি ভাড়া করে দেন। সে ভাবে দার্জিলিং যেতে কমবেশি ২৮০০ টাকা পড়ে, গ্যাংটক পড়ছে ৩৫০০ টাকা। সেখানে পর্যটকদের হয়রানিতে পড়তে হয় না।
ইস্টার্ন হিমালয় ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারের্টস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘প্রিপেড ট্যাক্সি বুথের উপরে অনেক পর্যটকই ভরসা করেন। তাই চালকেরাও ট্যাক্সি নিয়ে সেখানে দাঁড়ান। তার পরে ভাড়া কম বলে গোলমাল হয়। এই সমস্যা মিটবে যদি ভাড়ার তালিকার সংশোধন হয়।’’
পর্যটকদের বক্তব্য, ট্যাক্সি ভাড়া অনেক জায়গাতেই সংশোধন করা হয়নি। কিন্তু তা বলে এমন হয়রানির মুখে পড়তে হয় না। পরিবহণ দফতরের স্থানীয় এক কর্তা বলেন, ‘‘এই ভাড়ার তালিকা সংশোধন করার জন্য বেশ কয়েকবার আমরা কলকাতায় প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কিন্তু রাজ্য স্তর থেকে ভাড়া সংশোধন করা হয়নি। শুনেছি, খুব তাড়াতাড়ি করা হবে।’’ রাজ্য প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, শুধু এনজেপি নয়, এমন অবস্থা রাজ্যের অনেক ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেই। সবে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। নতুন পরিবহণ মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর নজরে বিষয়টি আনা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সমস্যার দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থার চেষ্টা আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
পর্যটকেরা অবশ্য অন্য প্রশ্নও তুলছেন। সুমন কলিতা নামে এক পর্যটক বলেন, ‘‘প্রিপেড ট্যাক্সি বুথে পর্যটকদের ট্যাক্সি ধরিয়ে দেওয়াটুকুই কি প্রশাসনের কাজ? রাস্তায় তাঁদের কী হল, তার উপরে কোনও নজরদারি থাকবে না?’’ শিলিগুড়ির বিদায়ী পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার বক্তব্য, ‘‘ভাড়ার তালিকা বহু পুরানো। এর সুযোগে মাঝে মধ্যেই পর্যটকদের ভোগান্তি হয়। বেশি দরও নেওয়া হয় শুনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিই। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। তবে ভাড়ার তালিকা সংশোধন করতে বলে আমরাও চিঠি দিয়েছি।’’
পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘সমস্যার কথা শুনেছি। আগেও কয়েক দফায় গাড়ি ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে এগোনো হয়েছিল। নানা কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি। এ বার আমি দেখছি। পরিবহণ দফতরের সঙ্গেও কথা বলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy