প্রতীকী ছবি।
বাস্তব পরিস্থিতি চাইছে শিল্পমুখী শিক্ষা। শিক্ষা আর শিল্পের ঘনিষ্ঠতাই বাস্তবের দাবি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঘনিষ্ঠতার বদলে শিল্পের সঙ্গে লেখাপড়ার দূরত্ব বাড়ছে। সামঞ্জস্য যেন ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে।
দূরত্ব ঘোচাতে তাই এ বার স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমে থাকুক শিল্পের ছোঁয়া। প্রয়োজনে পাঠ্যক্রম তৈরির কমিটিতে রাখা হোক শিল্পপতিদেরও। লখনউয়ে এ বারের আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমেলায় এই দাবিই তুললেন বিভিন্ন শিল্পপতি ও শিক্ষক।
উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ে যে-বিজ্ঞানমেলা হয়, শিল্পপতি ও শিক্ষকদের একটি সম্মেলনের আয়োজন থাকে সেখানে। এ বার সেই মঞ্চে শিল্পপতিরা অভিযোগ করেন, এ দেশের বিজ্ঞানীরা শুধু জার্নালে প্রকাশ করার জন্যই গবেষণা করেন। শিল্পের কাজে বা মানুষের কাজে লাগার মতো গবেষণা খুবই কম। অথচ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে, দেশীয় গবেষকদের তৈরি জিনিসপত্র
দিয়েই শিল্পপতিরা ভাল জিনিস তৈরি করে কম দামে বাজারে ছাড়তে পারেন। এতে উপকৃত হন সাধারণ মানুষই। ‘‘আমি প্রায় ১২ বছর ধরে বিভিন্ন সম্মেলনে এ কথা বলে আসছি। কিন্তু কিছুতেই পরিস্থিতির বদল হচ্ছে না। অ্যাকাডেমি ও শিল্পের মধ্যে দূরত্ব থেকেই গিয়েছে,’’ বলেন টি কে গুপ্ত নামে এক শিল্পপতি। শ্রোতার আসন থেকে কয়েক জন
শিক্ষক দাবি তোলেন, তা হলে উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রম তৈরির কমিটিগুলিতে শিল্পপতিদের রাখা হোক। তাঁদের প্রয়োজন মাথায় রেখে নির্ধারিত হোক পাঠ্যক্রম। তা হলে পঠনপাঠনের শেষে চাকরি এবং শিল্পে জোগান দু’টিই অনায়াসে নিশ্চিত করা যাবে।
যোধপুর থেকে আসা প্রাণিতত্ত্ব ও পরিবেশবিদ্যার শিক্ষক পুনিত সারস্বত বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষায় অতি অবশ্যই শিল্পপতিদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তা হলে চাকরির সমস্যা অনেকটাই মিটবে। পাঠ্যক্রম কমিটিতে থাকলে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম চালু করা যেতে পারে।’’ একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দেন, শিল্পের পিছনে দৌড়তে গিয়ে পঠনপাঠনে যাতে ভাটা না-পড়ে, সে-দিকে নজর রাখা প্রয়োজন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, স্কুল ও বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রে এখনই শিল্পপতিদের প্রতিনিধি রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সেটা অবশ্যই দরকার। ‘‘এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজে বাইরের সদস্য হিসেবে এক জন করে শিল্পপতি-প্রতিনিধি রাখতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কয়েকটি বিভাগ সেই অনুরোধ মেনেছে,’’ বলেন চিরঞ্জীববাবু। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট)-এর উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন, ‘‘অনেক আগে থেকেই পাঠ্যক্রম কমিটিতে শিল্পপতিদের রাখা হচ্ছে। কারণ তাতে চাকরির পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হয়।’’
বণিকসভা অ্যাসোচেমের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা পরমিন্দরজিৎ কউরের মতে, স্কুল স্তর থেকে পাঠ্যক্রমে শিল্পের প্রবেশ ঘটালে তবেই উচ্চশিক্ষায় তার ফল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন যে-‘মডেল কারিকুলাম’ তৈরি করেছে, তাতে শিল্পপতিদের মতামত নেওয়া হয়েছিল। ‘‘শিল্পের সঙ্গে শিক্ষার দূরত্ব কমলে চাকরির বাজার তো বাড়বেই। সেই সঙ্গে সমৃদ্ধ হবে শিল্পও,’’ বলছেন অ্যাসোচেমের ওই কর্তা।
কিন্তু স্কুল স্তর থেকে পাঠ্যক্রমে শিল্পপতিদের যুক্ত করতে রাজি নয় শিক্ষা শিবিরের একাংশ। তাদের অভিমত, স্কুল স্তরে ভিত মজবুত করার জন্য পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে পারদর্শী হয়ে ওঠাটাই কাম্য। শিল্পের জন্য উচ্চশিক্ষা স্তরে বৈপ্লবিক কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতেই পারে। স্কুল স্তরে নয়। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমেলা থেকে যে-প্রস্তাব আসছে, সেটা মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে ওঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy