গত ৫ অক্টোবর দেওয়া স্থগিতাদেশের মেয়াদ ছিল মঙ্গলবার পর্যন্ত। রাজ্যের ২৮ হাজার পুজো কমিটির প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান দেওয়ার উপরে সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ কাল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারের জন্য আদালত শেষ পর্যন্ত মামলাটি গ্রহণ করবে কি না, আজ, বুধবার তার রায় দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ আজই ঠিক হয়ে যাবে, ক্লাবকে পুজো অনুদানের বিষয়টি আদালতগ্রাহ্য থাকছে কি না।
পুজো উদ্যোক্তাদের সরকারি অনুদান নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এ দিন স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ায় হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ। মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চের আদৌ গ্রহণ করা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে আবেদনকারী এবং রাজ্যের কৌঁসুলিরা পাঁচ ঘণ্টা সওয়াল করেন। গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দু’পক্ষের শুনানি এ দিনই শেষ হয়।
জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীর বক্তব্য, দুর্গাপুজোয় বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে অনুদান দিলে তা দেশের সংবিধানকে আঘাত করে। কারণ, বিশেষ কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে এমন অনুদান দিয়ে উৎসাহিত করা সংবিধান-বিরোধী।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত তাঁর সওয়ালে জানান, জনগণের জন্য কত টাকা কী ভাবে করা খরচ হবে, তা পুরোপুরি বিধানসভার এক্তিয়ারভুক্ত। কোনও করদাতাই এই নিয়ে ওজর-আপত্তি তুলতে পারেন না। আত্মপক্ষ সমর্থনে দেশের কয়েকটি হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি দাখিল করেন এজি।
রাজ্যের পক্ষে এ দিন সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, যেটা বিধানসভার এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়, আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করতেই পারে না। সংবিধান আদালতকে সেই ক্ষমতা দেয়নি। মামলাটি গ্রহণযোগ্য কি না, তা বিচার করা তো পরের কথা, বলা উচিত, মামলাটি বিচারযোগ্য কি না, সেটা দেখারই এক্তিয়ার নেই ডিভিশন বেঞ্চের। বিচারপতি করগুপ্ত ওই প্রবীণ কৌঁসুলির উদ্দেশে বলেন, ‘‘টাকা বেসরকারি সংস্থার হাতে যাবে। তার অপব্যবহারের আশঙ্কা আছে বলে অভিযোগ উঠছে। আদালত কি নির্বাক দর্শক হয়ে থাকবে?’’
শক্তিনাথবাবু জানান, যদি ধরেও নেওয়া যায় যে পুরো টাকাই তছরুপ হবে, তা হলেও বিষয়টির বিচার করা উচিত হবে না আদালতের। কারণ, সরকারি টাকার অপব্যবহার নিয়ে বা এক তহবিলের টাকা অন্যত্র খরচের অভিযোগ উঠলে তা দেখার প্রাথমিক দায়িত্ব সিএজি বা কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের। বিধি অনুযায়ী সিএজি-র রিপোর্ট পেয়ে রাজ্যপাল তা পাঠাবেন পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির কাছে। সেই কমিটি বিধানসভার কাছে মতামত পাঠাবে। পরে তার বিচার করতে পারে আদালত। ‘‘দিল্লিতে এশিয়ান গেমস চলাকালীন বহু টাকা অপব্যহারের অভিযোগ উঠেছিল। তা সত্ত্বেও প্রথম অবস্থাতেই আদালত সেই অভিযোগের বিচার করতে বসেনি,’’ দৃষ্টান্ত দেন শক্তিনাথবাবু।
এই সওয়াল শুনে বিচারপতি করগুপ্ত মন্তব্য করেন, ‘‘সে-ক্ষেত্রে তো মৃতদেহে অক্সিজেন দেওয়া হবে!’’
বিচারপতি করগুপ্তও দৃষ্টান্তের আশ্রয় নিয়ে বলেন, ‘‘আদালত জল সরবরাহ বন্ধ করতে চাইছে না। সরকারি প্রকল্প নিয়েও আদালতের কিছু বলার নেই। কিন্তু আদালত যদি দেখে, সরবরাহ পাইপে ফুটো রয়েছে, তা হলে তারা সেই ফুটো বন্ধ করতে চাইবে।’’ ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি শম্পা সরকার প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আদালত জানতে চাইছে, কোন মাপকাঠিতে বেছে বেছে ২৮ হাজার পুজো উদ্যোক্তাকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে?’’ এজি জানান, নথিভুক্ত ক্লাবগুলিই ওই টাকা পাবে।
আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করেন, সরকার শুধু অনুদানই দিচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও দমকল কর্তৃপক্ষ, পুরসভা পুজোর উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে যে-কর আদায় করেন, তা-ও মকুব করেছে। সাধারণ নাগরিকেরা করে ছাড় পান না। ওই আইনজীবীর অভিযোগ, এজি দাবি করছেন, জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য ওই টাকা পুলিশের হাত দিয়ে উদ্যোক্তাদের দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, সরাসরি অনুদান দেওয়া হচ্ছে উদ্যোক্তাদের এবং সেই টাকা বাজেটে বরাদ্দ করা হয়নি। পুলিশের জনসংযোগের জন্য বাজেটে এক কোটির কিছু বেশি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২৮ কোটি কী ভাবে আসছে, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই।
এজি জানান, আগামী অর্থবর্ষে বাজেটে ওই বরাদ্দ দেখানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy