Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
State News

উঠোনে এসেছিলেন অমিত শাহ, রাত পোহাতেই সেই দুই পরিবার তৃণমূলে

তৃণমূল যুব কংগ্রেস সূত্রে এর পরে জানা যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই চার জনের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত হচ্ছে। কালীঘাট এলাকায় অভিষেকের যে পুরনো বাড়ি, সেখানেই সঞ্জয় রাজোয়াড়রা রয়েছেন বলেও জানা যায়।

বৃহস্পতিবার যাঁদের বাড়ি ঘুরে গেলেন অমিত শাহ, শুক্রবার বিকেলে তাঁদেরই দেখা গেল তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির বাড়ির সামনে। ছবি: সুমন বল্লভ।

বৃহস্পতিবার যাঁদের বাড়ি ঘুরে গেলেন অমিত শাহ, শুক্রবার বিকেলে তাঁদেরই দেখা গেল তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির বাড়ির সামনে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ২২:৫৬
Share: Save:

নকশালবাড়ির পুনরাবৃত্তি ঘটল পুরুলিয়ায়। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বৃহস্পতিবার ঘুরে এলেন যাঁদের বাড়ি থেকে, শুক্রবার বিকেলে তাঁদেরই দেখা গেল তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির বাড়ির সামনে। ‘‘অমিত শাহের ভয়ে পুরুলিয়া ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন ওঁরা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আশ্রয় পেতে চাইছেন,’’ বললেন মদন মিত্র। আর তীব্র আক্রমণ করে বিজেপি বলল, পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিতে বাধ্য করা হয়েছে ওঁদের।

পুরুলিয়ার লাগদা গ্রামে বৃহস্পতিবার দুপুরে দু’টি পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। জনসম্পর্ক অভিযানের অংশ হিসেবেই ওই কর্মসূচি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরে রাত থেকেই ওই দুই পরিবারের চার সদস্যকে আর গ্রামে পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার সকালে জানা যায়,শিশুবালা রাজোয়াড়, সঞ্জয় রাজোয়াড়, অষ্টমী রাজোয়ার এবং ফুচু রাজোয়াড় কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেবেন।

পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে মুখ খুলতে চায়নি। জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো জানিয়ে দেন, গোটা বিষয়টা দেখভাল করছে তৃণমূল যুব কংগ্রেস। লাগদার ওই চার জন কলকাতায় কোথায় রয়েছেন, কখন তাঁদের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেওয়া হবে, কোথায় সে কর্মসূচির আয়োজন হবে, সে বিষয়ে বিশদ তথ্য সে সময় জেলা তৃণমূলের কাছে ছিল না।

লাগদার ওই চার বাসিন্দাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র এবং সাংসদ শান্তনু সেন। ছবি: সুমন বল্লভ।

তৃণমূল যুব কংগ্রেস সূত্রে এর পরে জানা যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই চার জনের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত হচ্ছে। কালীঘাট এলাকায় অভিষেকের যে পুরনো বাড়ি, সেখানেই সঞ্জয় রাজোয়াড়রা রয়েছেন বলেও জানা যায়।

বিকেলে অভিষেকের ওই বাড়ির সামনেই সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়। অভিষেক নিজে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। লাগদার চার বাসিন্দাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র এবং সাংসদ শান্তনু সেন। মদন মিত্র বলেন, ‘‘এঁদের বাড়িতে গিয়ে অমিত শাহ হুকুমের সুরে, বাদশাহি মেজাজে বলেছেন, বিজেপি-তে যোগ দাও। যেন এঁরা ওঁর চাকর।’’ মদন মিত্র আরও বলেন, ‘‘এঁরা এমন ভয় পেয়েছেন, যে একেবারে এক কাপড়ে পালিয়ে এখানে এসেছেন।’’ লাগদার ওই দুই পরিবার বিজেপির হাত থেকে বাঁচতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্রয় চাইছে বলে মদন মিত্র দাবি করেন।

এই রকম ঘটনা প্রথম বার ঘটল না। আগের বার অমিত শাহ বাংলা সফরে এসে উত্তরবঙ্গের নকশালবাড়িতে যে পরিবারের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন, রাত পোহাতেই সেই পরিবারের হাতে তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুরুলিয়ার লাগদা গ্রামের ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটল। এতে বিজেপি-কে যে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

আরও পড়ুন: ভারতীকে ফেরার দেখিয়ে সিআইডির চার্জশিট, নাম দেহরক্ষী সুজিতেরও

আরও পড়ুন: তোলাবাজি করেই কোটি টাকার সম্পত্তি পিএফ কর্তার

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য মনে করছেন, অস্বস্তির কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘‘এ রকম তৃণমূল আগেও ঘটিয়েছে। ভয় পাচ্ছে বলেই পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এই রকম ঘটনা ঘটাচ্ছে।’’ দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘যাঁদের সঙ্গে অমিতজি বৃহস্পতিবার দেখা করতে গিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ বিজেপির কর্মী নন। জনসম্পর্ক অভিযানের অঙ্গ হিসেবে তিনি সারা দেশেই বহু মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন। পুরুলিয়াতেও তেমনই করেছিলেন। সমর্থন চেয়ে নিয়েছিলেন। এটুকুতেই তৃণমূল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। লোকগুলোকে কলকাতায় তুলে নিয়ে যেতে হয়েছে।’’

পুরুলিয়া জেলা বিজেপির সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূল নামে কোনও দল পুরুলিয়া জেলায় আর নেই। পুরুলিয়ায় এখন তৃণমূল নামে একটা ক্লাব রয়েছে, যেখানে সমাজবিরোধীদের আড্ডা। সেই সমাজবিরোধীরা পুলিশকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করছে। লাগদা থেকেও লোকগুলোকে ভয় দেখিয়েই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ বিদ্যাসাগরের দাবি, লাগদা হল পুরুলিয়া মফস্সল থানার ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের এলাকা। কলকাতা থেকে তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ই এ কাজে তৃণমূলকে সাহায্য করেছেন বলে তিনি তোপ দাগেন।

বিজেপির এই অভিযোগ অবশ্য নস্যাৎ করেছে তৃণমূল। মদন মিত্র বলেন, ‘‘বিজেপি নিজে তো ওই ভাবে রাজনীতি করে। তাই ভাবে আমরাও বোধ হয় সে রকমই করছি। আসলে পুরুলিয়া জেলা বিজেপির সভাপতি ভয় পাচ্ছেন। দিল্লি রেগে গেলে তাঁর চাকরি যাবে। চাকরি বাঁচাতেই তিনি ভুল বকছেন।’’

বিজেপির রাঢ় বঙ্গ জোনের আহ্বায়ক নির্মল কর্মকার অবশ্য বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অসন্তোষের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ ওঁরা কেউই বিজেপির কর্মী নন। ওঁরা সাধারণ নাগরিক। কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা ওঁরা পাচ্ছেন কি না, অমিতজি সে বিষয়েই খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন।’’

বিজেপি নেতারা যা-ই বলুন, রাজ্যের শাসক দল উল্লসিত। বিজেপি বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে বলেই তাঁরা মনে করছেন। মদন মিত্র বলেন, ‘‘আগের বার অমিত শাহ এসেছিলেন, কলাপাতায় ভাত খেয়েছিলেন, মুগ ডাল-আলু ভাজা দিয়ে। এ বার এলেন, চেয়ারও পেলেন না। সামনের বার আর ঢুকতেই পারবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE