সাদর: বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠকের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভ্যর্থনা। বৃহস্পতিবার নবান্নে। —নিজস্ব চিত্র।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ‘পুশ়ব্যাক’ করার কেন্দ্রীয় নীতি নিয়ে উত্তপ্ত হল বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সির প্রতিনিধি। বৈঠকে বিএসএফের ডিজি কৃষ্ণকুমার শর্মা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করার কথা বলায় তাঁকে কার্যত ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাদানুবাদ শুরু হতেই রাজনাথ তাতে হস্তক্ষেপ করেন। বিষয়টি তখনকার মতো থামে।
যদিও বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যে কোনও অনুপ্রবেশ রুখতে বিএসএফ সতর্ক রয়েছে। অনুপ্রবেশ রুখতে হবে।’’
বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে এ দিন সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের শুরুতেই তিনি বক্তব্য রাখেন। এ দিনের আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় নীতির ব্যাখ্যা। এ প্রসঙ্গে বিএসএফের ডিজি শর্মা বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি। তাদের ধরে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে গেলে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। সেই কারণে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা সীমান্তে ধরা পড়লে তাদের সঙ্গে সঙ্গে পুশব্যাক করার নীতি নেওয়া হয়েছে। গত তিন বছরে কয়েকশো উদ্বাস্তুকে এ ভাবে পুশব্যাক করাও হয়েছে।’’
এই কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মমতা। তিনি বলে ওঠেন, ‘‘এ ভাবে কেন পুশব্যাক করা হচ্ছে! এটা কোনও মানবিক নীতি হতে পারে না। রাষ্ট্রপুঞ্জও রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশেষ নীতি গ্রহণ করেছে। মানবিক ভাবেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, দমদম জেলে ৪৪ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি হোমেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা মহিলা ও শিশু রয়েছে। তাদের কোনও ভাবেই পুশব্যাক করা হবে না। তিনি জানান, এমন অমানবিক কাজ রাজ্য করবে না।
এর পরেও বিএসএফের ডিজি পুশব্যাকের তত্ত্বেই অনড় থাকেন। পাল্টা কিছু বলার চেষ্টাও করেন। সে সময় তাঁকে ইশারায় চুপ করতে বলেন রাজনাথ। তিনিও চুপ করে যান। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যগুলি অবশ্য কেন্দ্রের রোহিঙ্গা নীতি নিয়ে কোনও সাড়াশব্দ করেনি। অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম সীমান্ত দিয়ে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে ইতিমধ্যেই পুশব্যাক করা হয়েছে। এ রাজ্যের স্বরূপনগর সীমান্তেও গত ১২ অক্টোবর ১৬ জন রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে বিএসএফ। যদিও মিজোরামের লনঙ্গতলাই জেলায় মায়ানমারের রাখাইন থেকে আসা ১৩০০ বৌদ্ধ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়েছে কেন্দ্র। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করছে কেন্দ্র। আবার সম্প্রতি রাজ্যের নানা হোমে থাকা রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল নবান্ন। সে খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবা রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দেকে ফোন করে তখনই পরিচয়পত্র দেওয়া বন্ধ করতে বলেছিলেন। তার পরে রোহিঙ্গাদের আর পরিচয়পত্র বিলি করাও যায়নি। এ বার সরাসরি বিরোধ হল পুশব্যাক নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy