Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাট পচাতে স্বচ্ছ জলই কম, নামছে তন্তুর মান

পাটকাঠি পুরোপুরি ডুবে থাকলে পচে ভাল। পরিষ্কার জলে পচলে কাঠির ভিতর থেকে যে-তন্তু বেরিয়ে আসে, সেগুলো মোটা ও মজবুত হয় বলে জানাচ্ছে জুট কর্পোরেশন। কিন্তু পাট পচানোর পরিষ্কার জলে টান পড়ায় তন্তুর গুণমান যেমন নেমে যাচ্ছে, বিপাকে পড়ছেন কৃষকেরাও।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৮
Share: Save:

পাটকাঠি পুরোপুরি ডুবে থাকলে পচে ভাল। পরিষ্কার জলে পচলে কাঠির ভিতর থেকে যে-তন্তু বেরিয়ে আসে, সেগুলো মোটা ও মজবুত হয় বলে জানাচ্ছে জুট কর্পোরেশন। কিন্তু পাট পচানোর পরিষ্কার জলে টান পড়ায় তন্তুর গুণমান যেমন নেমে যাচ্ছে, বিপাকে পড়ছেন কৃষকেরাও।

সব জলাশয়ে পাট পচানো যায় না। ব্যক্তি-মালিকানার পুকুরে সব সময় সেই অনুমতিও মেলে না। তাই রাস্তার ধারের নয়ানজুলি এবং ছোট জলাশয়গুলিই ছিল চাষিদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেগুলোও ধীরে ধীরে বুজে যাচ্ছে। তার উপরে অনেক জলাশয়ে কয়েক বছর ধরে সমবায়ের ভিত্তিতে মাছ চাষ শুরু হওয়ায় পাট পচাতে নাজেহাল হচ্ছেন পাটচাষিরা। ১৫ ফেব্রুয়ারি পাট উৎপাদক রাজ্যগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি ও বস্ত্র মন্ত্রকের বৈঠকে জলাশয়ের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে বলে জানাচ্ছে জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (জেসিআই)। পাটচাষিদের সমস্যা বুঝতে বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে ওই সব রাজ্যের কৃষিকর্তাদেরও।

পর্যাপ্ত পরিষ্কার জলের অভাবে পাঁক-পুকুরে পাট পচাতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। ফলে উন্নত মানের পাট মিলছে না। তারই অবধারিত প্রভাব পাটতন্তুর গুণমানে এবং চটশিল্পে পড়ছে বলে জানাচ্ছে জেসিআই। চটকল-মালিকদের হিসেবে, এ রাজ্যে যে-পরিমাণ পাট উৎপন্ন হয়, তার ৭০-৮০ শতাংশই নিম্ন মানের (মানের বিচারে পাঁচ নম্বর বা তারও নীচে)। ফলে তাতে ভাল ব্যাগ বা অন্য সামগ্রী তৈরি করা যাচ্ছে না।

চটশিল্প সূত্রের খবর, ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে এ-পর্যন্ত সারা দেশে ৯০ লক্ষ বেল পাট উৎপন্ন হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ৭৯ লক্ষ বেল। অর্থাৎ এ বারের উৎপাদন ১১ লক্ষ বেল বেশি। কিন্তু চটকল-মালিকদের বক্তব্য, এ রাজ্যে পাটের উৎপাদন বাড়লেও মান সন্তোষজনক নয়। কারণ হিসেবে তাঁরা নিম্ন মানের বীজ ব্যবহারকে দায়ী করছেন। একই সঙ্গে বলছেন, জলাশয়-সমস্যা পাটতন্তুর নিচু মানের অন্যতম মূল কারণ। জেসিআই বলছে, উত্তরবঙ্গে তবু উন্নত মানের কিছু পাট মেলে। কেননা সেখানে এখনও বহু জলাশয় রয়েছে। একদা পাট উৎপাদনে হুগলি, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের নাম ছিল। সেখানেও পাটের পরিমাণ কমেছে।

জেসিআইয়ের প্রস্তাব, বুজে যাওয়া নয়ানজুলি ও খাল কাটার বিষয়টিকে ১০০ দিনের কাজের আওতায় আনা হোক। ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে যে-সব পুকুর কাটা হয়েছে, সেগুলোর কিছু যদি পাটকাঠি পচানোর জন্য নির্দিষ্ট করা যায়, তা হলে উন্নত মানের পাট পাওয়া যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jute Cultivation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE