হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিরাই কোনও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের শীর্ষে বসতে পারেন বলে আইনজীবী শিবিরের অভিমত। সেই জায়গায় এক জন প্রাক্তন পুলিশ-প্রধানকে অস্থায়ী চেয়ারম্যান করে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাজ চালানো হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। হয়েছে মামলাও।
রাজ্য সরকার সেই মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত, এমন প্রার্থী না-মেলায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ করা যাচ্ছে না। শুক্রবার এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ওই রিপোর্ট দাখিল করেন রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অভ্রতোষ মজুমদার।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের এক জন প্রাক্তন বিচারপতিই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের শীর্ষে ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে ওই পদে স্থায়ী ভাবে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। বর্তমানে অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে কমিশনের কাজ চালাচ্ছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ-প্রধান নাপরাজিত মুখোপাধ্যায়।
প্রায় প্রতিদিনই মানবাধিকার সংক্রান্ত নানা বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়ছে কমিশনে। এই অবস্থায় সেখানে স্থায়ী চেয়ারম্যান নিযুক্ত না-হওয়ায় গত বছর হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেন বিপ্লব চৌধুরী নামে বিরাটির এক বাসিন্দা। তাঁর আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস এ দিন জানান, ১৯৯৩ সালের ‘প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটস অ্যাক্ট’ বা মানবাধিকার রক্ষা আইনের ২১ (২) ধারা অনুযায়ী কোনও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান-পদে নিযুক্ত করতে হবে দেশের কোনও হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে অথবা সুপ্রিম কোর্টের কোনও প্রাক্তন বিচারপতিকে। কিন্তু পূর্বতন স্থায়ী চেয়ারম্যান সরে যাওয়ার পরে সেই বিধি মেনে কাউকে ওই পদে স্থায়ী ভাবে বসানো হয়নি।
অনিন্দ্যবাবুর বক্তব্য, সরকার এ দিন আদালতে যে-রিপোর্ট পেশ করেছে, সেটি তৈরি করেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক যুগ্মসচিব। রিপোর্টে জানানো হয়েছে: গত ১৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের কাছে একটি চিঠি পাঠান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব। চিঠিতে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের (তাঁদের বয়স ৬৮ বছরের মধ্যে হতে হবে) নামের তালিকা এবং যোগাযোগের নম্বর চাওয়া হয়েছে। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিদের কেউ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হতে রাজি হলে তাঁকে নিযুক্ত করা হবে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে দাখিল করা রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে মেঘালয় সরকার জানিয়েছে, তাদের রাজ্যের হাইকোর্টে কোনও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নেই। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তালিকা চেয়ে আবার চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব।
ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, এই রিপোর্টের ব্যাপারে মামলার আবেদনকারীর কিছু বলার থাকলে হলফনামা দিয়ে তাঁকে তা জানাতে হবে। আবার এই মামলার শুনানি হবে দু’সপ্তাহ পরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy