সুইসাইড নোটে প্রেমিক এবং সালিশি সভার আয়োজকদের দায়ী করে গিয়েছেন এক কলেজছাত্রী। তাঁর অপমৃত্যুতে ওই দুই পক্ষ তো বটেই, সেই সঙ্গে পুলিশও এখন কাঠগড়ায়। কেননা তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। পুলিশ সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে হবে।
পুলিশ জানায়, উনিশ বছরের ওই ছাত্রী মগরাহাট থানার রাধানগর খ্রিস্টানপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। পড়শি যুবক উজ্জ্বল বাগের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। ছাত্রীর পরিবারের দাবি, ওই যুবক তাদের মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেন। কিন্তু পরে তিনি বিয়ে করতে রাজি না-হওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। গত বছর ২ জুলাই গ্রামে সালিশি সভা বসে। সেখানে ছাত্রীকেই হেনস্থা করা হয় এবং তাঁর চরিত্র নিয়ে কুকথা বলা হয় বলে অভিযোগ।
মেয়ের পরিবারের আরও অভিযোগ, তার পরে সালিশি সভার আয়োজকেরা ছাত্রীটিকে দেখলেই অপমান করতেন। মেয়েটির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন ওই যুবকও। অপমানিত ছাত্রীটি ২১ নভেম্বর গলায় শাড়ির ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। ওই যুবক এবং সালিশির আয়োজকদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে এফআইআর করেন ছাত্রীর বাবা। কিন্তু পুলিশ উজ্জ্বল বা সালিশির আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়ায় মেয়েটির বাবা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানান। তাতেও কাজ হয়নি।
পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সপ্তাহখানেক আগে হাইকোর্টে মামলা করেন মেয়ের বাবা। বিচারপতি বসাকের আদালতে এ দিন তার শুনানি ছিল। ছাত্রীর বাবার আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানান, আত্মহত্যার পরে ছাত্রীর ঘরে দু’টি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, আত্মহত্যার জন্য উজ্জ্বল ও সালিশির আয়োজকদের দায়ী করেছেন ওই ছাত্রী। সুইসাইড নোটের কথা পুলিশকে জানানো হয়েছিল। পুলিশ সেগুলো বাজেয়াপ্ত করেনি। ছাত্রীর বাবাকে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে গিয়ে গোপন জবানবন্দিও নথিভুক্ত করায়নি। যাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি তাঁদেরও। আদালতে ওই কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেন, উজ্জ্বল এবং সালিশি সভার আয়োজকেরা অবাধে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উজ্জ্বলকে মোবাইল ফোনে কথাও বলতে দেখেছেন অনেকে।
সরকারি কৌঁসুলি সুব্রত গুহ বিশ্বাস আদালতে একটি রিপোর্ট পেশ করে জানান, পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। অভিযুক্তের মোবাইল বন্ধ। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিচারপতি বলেন, আবেদনকারীর অভিযোগে ভিত্তিতে কী কী তদন্ত হয়েছে, তা বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে। মোবাইল ফোনের কল ডিটেলস খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত যুবকের গতিবিধি জানানোর নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy