Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
চিন্তার জল/১

ব্যারাজ ফের শুকোলে কী বিকল্প, প্রশ্নই

মাস কয়েক আগে এক দুর্ঘটনার জেরে হঠাৎই জলশূন্য হয়ে পড়েছিল শহর। বিপাকে পড়েছিলেন শহরবাসী। মাথায় হাত পড়েছিল কর্তাদের। ফের যদি সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়, সামাল দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কি তৈরি হয়েছে— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।মাস কয়েক আগে এক দুর্ঘটনার জেরে হঠাৎই জলশূন্য হয়ে পড়েছিল শহর। বিপাকে পড়েছিলেন শহরবাসী। মাথায় হাত পড়েছিল কর্তাদের। ফের যদি সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়, সামাল দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কি তৈরি হয়েছে— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

লকগেট বিকলের জেরে গত নভেম্বরে এ ভাবে জলশূন্য হয়ে পড়েছিল দুর্গাপুর ব্যারাজ। শহরে তৈরি হয়েছিল জলসঙ্কট। ফাইল চিত্র

লকগেট বিকলের জেরে গত নভেম্বরে এ ভাবে জলশূন্য হয়ে পড়েছিল দুর্গাপুর ব্যারাজ। শহরে তৈরি হয়েছিল জলসঙ্কট। ফাইল চিত্র

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

এমনটা যে ঘটতে পারে, কল্পনাতেও ছিল না কারও। তাই বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি রাখা প্রয়োজন, সে কথাও ভাবনায় আসেনি। গত নভেম্বরে দুর্গাপুর ব্যারাজের ১ নম্বর লকগেটটি বিকল হয়ে পড়ায় শহরে জলের সঙ্কট তৈরি হতে তা মাথায় আসে প্রশাসনের কর্তাদের। সেই ঘটনার পরে প্রায় আট মাস পার। কিন্তু আবার যদি ব্যারাজের জল শুকিয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কী হবে— প্রশ্ন বাসিন্দাদের মনে। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে জলের জোগান স্বাভাবিক রাখার মতো বন্দোবস্ত এখনও করে ওঠা যায়নি। তবে ভাবনাচিন্তা চলছে পুরোদমে।

দুর্গাপুর শহরে পানীয় জলের প্রধান উৎস দামোদর। শহরের এক-একটি অংশে পানীয় জল সরবরাহ করে বিভিন্ন সংস্থা— কোথাও দুর্গাপুর পুরসভা, কোথাও দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি), আবার কোথাও দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। তবে জলের উৎস সেই এক দামোদর। ব্যারাজ থেকে বেরিয়ে যাওয়া আট কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ফিডার ক্যানাল’-এর পাশে রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার পাম্পহাউস। পাম্পের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জল তুলে তা পরিশোধনের জন্য পাঠানো হয় শোধনাগারে। এর পরে সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে সংস্থাগুলি। এ ছাড়া, দু-একটি গভীর নলকূপও আছে সংস্থাগুলির। আপতকালীন পরিস্থিতিতে পাম্প চালিয়ে সেগুলি থেকে জল তুলে ট্যাঙ্কারে করে পাঠানো হয়।

শুধু পানীয় জল নয়, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা কল-কারখানা, বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও ভরসা দামোদর। উল্টো দিকে, বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ অংশও জলের জন্য দুর্গাপুর ব্যারাজের দিকেই তাকিয়ে থাকে। মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাঁকুড়া শহর, ব্যারাজের উপরেই নির্ভর করে।

কিন্তু নভেম্বরে ব্যারাজের লকগেটটি বিকল হয়ে যাওয়ার পরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয় তা সামাল দেওয়ার মতো বিকল্প ব্যবস্থা কোনও সংস্থারই ছিল না। ব্যারাজের সব জল বার করে দিয়ে তবে গেটটির মেরামতি করা সম্ভব হয়। পানীয় জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে যায় শহর জুড়ে। চড়া দামে জল কিনতে বাধ্য হন অনেকে। ইসিএল এবং অন্য নানা সূত্রের মাধ্যমে ট্যাঙ্কারে করে জল এনে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুরসভা।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরেই শহরের জন্য বিকল্প জলের উৎস খোঁজার তোড়জোড় শুরু হয়। জরুরি পরিস্থিতিতে দু’তিন দিন কোনও রকমে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে ব্যারাজের কাছেই সেচ দফতরের অধীনে থাকা খালটি নজরে আসে। সেটি আগে ফিডার ক্যানালেরই অংশ ছিল। ২০১২ সালের বন্যায় ক্যানালের লকগেট ভেঙে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সেই জল বার করতে বালির বস্তার বাঁধ দেওয়ায় খালটি আলাদা হয়ে যায়। দামোদরের পাড় ও বীরভানপুর গ্রামের মাঝে প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা খালটিতে ব্যারাজের জল মজুত রেখে প্রয়োজনমতো তা শোধনাগারে পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দু’তিন দিন চালিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশা করেন আধিকারিকেরা। কিন্তু বাদ সেধেছে অন্য সমস্যা।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barrage Dry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE