প্রতীকী ছবি।
নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। সরকার দুধের সহায়ক মূল্য বাড়াতেই চায়। অথচ তা বাড়ছে না। কেন? এই নিয়ে প্রাণিসম্পদ দফতরের অন্দরে কানাঘুষো শুরু হয়েছে। রাজ্যে রোজই নিজস্ব দুধ সংগ্রহের পরিমাণ কমছে। ফলে বাড়ছে গুঁড়ো দুধ ব্যবহারের প্রবণতা। চাপ বাড়ছে কোষাগারেও।
প্রাণিসম্পদ দফতরের শীর্ষ কর্তারা জানাচ্ছেন, শেষ পর্যায়ের কিছু হিসেবনিকেশ চলছে, খুব শীঘ্রই দুধ সংগ্রহের জন্য প্রতি লিটারে চার টাকা দাম বাড়ানো হবে। তাতে উপকৃত হবেন রাজ্যের দুধ উৎপাদকেরা।
নীতিগত সিদ্ধান্তের পরেও দুধের সহায়ক মূল্য বাড়ছে না কেন? ‘‘অর্থ দফতরের কাছে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এই নিয়ে অর্থ দফতর ছাড়পত্র দিলেই দাম বাড়বে,’’ বলেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।
প্রাণিসম্পদ দফতরের খবর, রাজ্যে প্রতিদিন এক কোটি ৪৭ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। কিন্তু দুগ্ধ সমবায় রোজ দু’লক্ষ লিটারের বেশি সংগ্রহ করতে পারে না। কোনও কোনও সময় তা আড়াই লক্ষ লিটারে পৌঁছয় মাত্র। অথচ বিভিন্ন বেসরকারি ডেয়ারি ও ভিন্ রাজ্যের দুগ্ধ সমবায়গুলি দিব্যি বাংলা থেকে দৈনিক লক্ষ লক্ষ লিটার দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি কেন? প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্তাদের একাংশ জানান, ভিন্ রাজ্যের একটি দুগ্ধ সমবায় বাজার থেকে প্রতি লিটার ৩১-৩২ টাকা দরে দুধ সংগ্রহ করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার দুধ কেনে প্রতি লিটার ২৪-২৫ টাকা দরে। এর সঙ্গে লিটার-পিছু দু’টাকা উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু সহায়ক মূল্য কম বলেই উৎপাদকেরা রাজ্য সমবায়কে দুধ বিক্রি করতে তেমন উৎসাহী নন বলে জানাচ্ছেন কর্তারা।
এ রাজ্যে দুধ সংগ্রহের সহায়ক মূল্য শেষ বার বেড়েছিল ২০১৫ সালে। এখন রাজ্যে প্রতিদিন গড়ে দেড় লক্ষ লিটারের বেশি দুধ সংগৃহীত হচ্ছে না। সেই জন্য রাজ্য দুগ্ধ সমবায় লিটার-প্রতি ছ’টাকা সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। দফতর শেষ পর্যন্ত চার টাকা সহায়ক মূল্য বাড়াতে সম্মত হয়েছে। সে-ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ৩০-৩১ টাকা দরে উৎপাদকদের থেকে দুধ কিনবে রাজ্য দুগ্ধ সমবায়। কিন্তু রাজ্য সরকার খুচরো বাজারে দুধের দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি। এর ফলে রোজ অতিরিক্ত ১০ লক্ষ টাকার বাড়তি বোঝা চাপতে চলেছে রাজ্যের ঘাড়ে। বছরে দুধ সংগ্রহের খরচ বাড়ছে সাড়ে ৩৬ কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্তারা জানান, বাড়তি খরচ হলেও তাতে আখেরে লাভ রাজ্যেরই। কারণ, মাদার ডেয়ারি, সেন্ট্রাল ডেয়ারি বা হরিণঘাটায় যে-দুধ তৈরি হয়, তাতে ৭০ ভাগ উৎপাদকদের থেকে সংগৃহীত দুধ এবং ৩০ ভাগ গুঁড়ো দুধ দেওয়ার কথা। দুধ সংগ্রহ কম হলে একই উৎপাদন বজায় রাখার জন্য বেশি গুঁড়ো দুধ দিতে হয়। গত কয়েক বছরে গুঁড়ো দুধের দাম অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় তাতেও সরকারের ঘাড়ে বাড়তি বোঝা চাপছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy