Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কোন পথে চলি? রবি এখন কাটোয়ার কেজরী

এ বার কাটোয়াতেও কেজরীবাল! আম কর্মীদের কাছে যাচ্ছেন একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। বৈঠক করছেন। জানতে চাইছেন— ‘‘কী করা উচিত আমার? থাকা উচিত কোন দলে?’’ জল্পনার পাহাড়ে বসে থাকা বর্ধমানের কাটোয়ার কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ (রবি) চট্টোপাধ্যায় জানিয়েও দিচ্ছেন, দু’তিন দিনের মধ্যেই হয় এসপার, নয় ওসপার (পড়ুন, ‘হয় কংগ্রেস, নয় তৃণমূল’)।

রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

এ বার কাটোয়াতেও কেজরীবাল!

আম কর্মীদের কাছে যাচ্ছেন একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। বৈঠক করছেন। জানতে চাইছেন— ‘‘কী করা উচিত আমার? থাকা উচিত কোন দলে?’’ জল্পনার পাহাড়ে বসে থাকা বর্ধমানের কাটোয়ার কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ (রবি) চট্টোপাধ্যায় জানিয়েও দিচ্ছেন, দু’তিন দিনের মধ্যেই হয় এসপার, নয় ওসপার (পড়ুন, ‘হয় কংগ্রেস, নয় তৃণমূল’)।

তার আগেই অবশ্য নজর কেড়েছে রবিবাবুর মত গ্রহণের পন্থাটা। ‌একেই অনেকে বলছেন, ‘কেজরীবাল স্টাইল’। কারণ, অনেকটা এই ভাবেই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করার আগে আম আদমির মত নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল! তা সে প্রথম বার ভোটে লড়ে দিল্লিতে সরকার গড়াই হোক বা নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ করে লোকসভা ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে বারাণসীতে দাঁড়ানোই হোক। আবার সেই কেজরীই গত বিধানসভা ভোটের আগে কার্যত আম আদমির দরজায়-দরজায় গিয়ে হাতজোড় করে স্বীকার করেছিলেন যে, প্রথম বার ইস্তফা দেওয়াটা ঠিক হয়নি।

বঙ্গের ঘোর জ্যৈষ্ঠে রবিবাবুর মধ্যে যেন হঠাৎই দিল্লির ‘মাফলারম্যানে’র ছায়া।

কাটোয়ায় কংগ্রেসের শেষ কথা রবিবাবু। শুধু বিধায়ক বলে নয়। তাঁর নেতৃত্বে টানা দু’দশক কাটোয়া পুরসভায় একাধিপত্য বজায় রেখেছিল কংগ্রেস। সেই তিনি যে এ বার তৃণমূলে যাওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছেন, ইঙ্গিতটা গত কয়েক দিন ধরেই মিলছিল। স্বভাবতই জল্পনা শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের অন্দরে ভাঙন নিয়ে। গত শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে দেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। অথচ সেই দিনেই রবিবাবু দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।

রবিবাবুর দাবি, কাটোয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতেই সে দিন তিনি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এবং তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে তৃণমূলে আসার প্রস্তাব দেন। রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের কাছেও জানতে চান, ‘রবি’ দলে এলে তাঁদের আপত্তি আছে কি না। স্বপনবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ‘রবি’ তাঁর পুরনো সঙ্গী। তিনি তৃণমূলে এলে দল শক্তিশালী হবে।

এর পর কাটোয়ায় ফিরেই শনি ও রবিবার দলের কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন রবিবাবু। কংগ্রেস সূত্রের খবর, দু’এক জন বাদে সকলেই রবিবাবুকে বলেছেন, ‘‘আপনি যা করবেন, সেই দিকেই আমরা থাকব।” রবিবার দুপুরে বৈঠক হয় বিভিন্ন পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রতিনিধি ও কর্মীদের নিয়ে। সেখানেও তৃণমূলে যাওয়ার দিকেই পাল্লা ভারী ছিল। কালনা, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী-সহ জেলা কংগ্রসের একটা বড় অংশও রবিবাবুর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে বলে খবর। যদিও শ্রীখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মজুমদার বা কেতুগ্রামের কর্মীদের একাংশ তাঁকে দল না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সোমবারও বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের ঘরে এবং কংগ্রেসের বেঞ্চে বসেছিলেন রবিবাবু। কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, অধীর চৌধুরী, মানস ভুঁইয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা অনেকেই তাঁকে ফোন করে দল না ছাড়তে অনুরোধ করছেন।

কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, গত বছর রবিবাবুর ঘনিষ্ঠ অমর রাম শিবির বদল করার পরে কাটোয়ায় হাওয়া অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে। সদ্য পুরভোটে অর্ধেক আসন কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। শাসক দল বোর্ড গড়লে শহরের উন্নয়ন হবে, এই যুক্তি দিয়ে রবিবাবুরা ‘টস’-এ না যাওয়ায় বিনা বাধায় বোর্ডও গড়েছে। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে কাটোয়া আর ‘নিরাপদ কেন্দ্র’ থাকবে কি না, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইতিমধ্যে কংগ্রেসের লরি ও ট্যাক্সি ইউনিয়ন তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছে। পা বাড়িয়ে আছেন বাসকর্মীরাও। ফলে পরিস্থিতি উদ্বেগের তো বটেই।

রবিবাবু কী বলছেন?

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কিছুটা ধোঁয়াশা রেখেই কাটোয়ার বিধায়ক বলেন, “আমি কর্মীদের পরামর্শ মেনেই কাজ করি। এখনও তাঁদের পরামর্শ নিচ্ছি। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।” মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “শুনেছি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ওঁর কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই শিরোধার্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE