Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

১০০ কোটির প্রকল্প অকেজো ক্যানসারে

ক্যানসারের চিকিৎসায় যে যন্ত্রটির ব্যবহার অপরিহার্য বিশ্ব জুড়েই।

লিনিয়র অ্যাক্সিলারেটর যন্ত্র।

লিনিয়র অ্যাক্সিলারেটর যন্ত্র।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

কোথাও টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিছু শিশু। আবার কোথাও ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প অকেজো হয়ে রয়েছে ‘সদিচ্ছা’র অভাবে। যেমন, রাজ্যের তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই মুহূর্তে কার্যত অকেজো ‘লিনিয়র অ্যাক্সিলারেটর’। ক্যানসারের চিকিৎসায় যে যন্ত্রটির ব্যবহার অপরিহার্য বিশ্ব জুড়েই।

বছর দেড়েক আগে আরজিকর, নীলরতন সরকার এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত মানের রে়ডিয়োথেরাপি দেওয়ার জন্য ওই যন্ত্রগুলি কেনা হয়। প্রকল্পের মোট খরচ ১০০ কোটি। অথচ আরজিকরে এখনও সেই যন্ত্র বসানো হয়নি। বাকি দুই জায়গায় তা বসলেও পরিষেবা মিলছে নামমাত্র।

লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটরে দ্রুত রেডিয়োথেরাপি করা যায়। ফলে প্রতি দিন বহু রোগীর চিকিৎসার সুযোগ মেলে। পাশাপাশি এই যন্ত্রে শুধুমাত্র ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিকেই চিহ্নিত করে রেডিয়েশন দেওয়া হয়, ফলে সুস্থ কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে যন্ত্রগুলি বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার পরেই দেখা দিতে থাকে জটিলতা। যেমন, এনআরএস হাসপাতালের এক টেকনিশিয়ান স্বাস্থ্য ভবনে লিখিত অভিযোগ করেছেন যে, ওই হাসপাতালে রেডিয়োথেরাপি বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যের উন্নত রেডিয়োথেরাপি পরিষেবা স্বাভাবিক করতে চাইছেন না। কারণ, তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠাতে চান। এমনকি, সেই কারণে ওই যন্ত্র দ্রুত চালু করার জন্য সংরক্ষিত প্রয়োজনীয় তথ্য নষ্ট করার অভিযোগও উঠেছে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। যদিও এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় প্রধান শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘কতটা কাজ হয়েছে ধারণা নেই। বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রতি দিন ওই যন্ত্রে অন্তত ১৫০ জন রোগীর পরিষেবা পাওয়ার কথা। অথচ সেখানে তা পাচ্ছেন বড় জোর ৩০ জন। বাকিদের চিকিৎসা চলছে কোবাল্ট যন্ত্রেই। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য নতুন ভবন তৈরি হলেও প্রয়োজনীয় ‘ফোর ডি স্ক্যান’ যন্ত্র নেই। এমনকি, যন্ত্রের জন্য আবেদনও হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েনি। যার জেরে মস্তিষ্ক, ফুসফুসে ক্যানসার আক্রান্তেরা ‘লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর’-এর পরিষেবা পাচ্ছেন না। মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘কাজ পুরোপুরি কেন শুরু করা যায়নি, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’

আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে এখনও তালাবন্ধ যন্ত্রটি। ট্রমা কেয়ারের নীচে বেসমেন্টে রেডিয়োথেরাপি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি রাজ্য পূর্ত দফতর। রেডিয়োথেরাপি বিভাগের প্রধান চন্দন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সদ্য বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছি। দেরি হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে হবে।’’

পুরোদমে এই পরিষেবা চালু না হওয়ায় তিন হাসপাতালেই এখনও পুরনো অর্থাৎ কোবাল্ট পদ্ধতিতেই রেডিয়োথেরাপি চলছে। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের অপেক্ষার লাইন কমাতে চাইছেন না তিন হাসপাতালের কিছু কর্মীই। রেডিয়োথেরাপির দিন এগিয়ে আনার জন্য অনেক সময়েই রোগীর পরিজনদের থেকে বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত টাকা চান তাঁরা।

এত কিছুর পরেও অবশ্য হেলদোল নেই স্বাস্থ্য দফতরের। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘উন্নত যন্ত্র চালু করতে সময় লাগে। সব কিছু তো চোখের পলকে হয়ে যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Radiotherapy Medical College Health Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE