Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পানি মিলেগা? প্রশ্ন শুনে কথা গুলিয়ে গেল

‘‘পানি মিলেগা?’’ ঘুপচি ঘরে তখন রান্না চড়িয়েছেন অঞ্জুদেবী। হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে ওই প্রশ্ন। চমকে পিছন ফিরতেই সাদা পাঞ্জাবি, নীল জিন‌্‌সে যাঁকে দেখলেন, এত দিন তাঁকে টিভিতেই দেখেছেন। তাঁর ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জল চাইছেন রাহুল গাঁধী! নিজের দুর্দশার কথা বলবেন কী! রাহুলকে দেখে কথা গুলিয়ে গেল অঞ্জুদেবীর। বিছানায় বসতে বলে পড়িমরি এক গ্লাস জল তুলে দিলেন রাহুলের হাতে। কিন্তু কথা সরলো না।

ওয়েলিংটন জুটমিল থেকে বেরোনোর পর রাহুল গাঁধী। সঙ্গে রয়েছেন অধীর চৌধুরীও। শনিবার জিটি রোডে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

ওয়েলিংটন জুটমিল থেকে বেরোনোর পর রাহুল গাঁধী। সঙ্গে রয়েছেন অধীর চৌধুরীও। শনিবার জিটি রোডে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল
রিষড়া শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

‘‘পানি মিলেগা?’’

ঘুপচি ঘরে তখন রান্না চড়িয়েছেন অঞ্জুদেবী।

হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে ওই প্রশ্ন। চমকে পিছন ফিরতেই সাদা পাঞ্জাবি, নীল জিন‌্‌সে যাঁকে দেখলেন, এত দিন তাঁকে টিভিতেই দেখেছেন। তাঁর ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জল চাইছেন রাহুল গাঁধী!

নিজের দুর্দশার কথা বলবেন কী! রাহুলকে দেখে কথা গুলিয়ে গেল অঞ্জুদেবীর। বিছানায় বসতে বলে পড়িমরি এক গ্লাস জল তুলে দিলেন রাহুলের হাতে। কিন্তু কথা সরলো না।

অঞ্জুদেবী রিষড়ার ওয়েলিংটন চটকলের শ্রমিক কুন্দন সাউয়ের স্ত্রী। শনিবার ওই চটকলের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কর্মসূচির বাইরে বেরিয়ে শ্রমিক মহল্লায় আচমকা ঢুঁ মারেন রাহুল। ঢুকে পড়েন কুন্দন-সহ আরও কয়েক জন শ্রমিকের ঘরে। অঞ্জুদেবীর মতো সকলেই চমকেছেন। তবে প্রাথমিক ঘোরটা কাটিয়ে নিজেদের দুর্দশার কথা কংগ্রেস সহ-সভাপতির কাছে তুলেও ধরেছেন অনেকে।

অঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘অনেক কিছুই ভেবে রেখেছিলাম বলব বলে। কিন্তু উনি যে ভাবে নিজেই বাড়ি চলে এলেন, জল চেয়ে খেলেন, কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে গেল।’’ রাহুলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উচ্ছ্বসিত ওই চটকলের ‘প্রিপেয়ারিং’ বিভাগের শ্রমিক নিজামুদ্দিন আনসারি বললেন, ‘‘উনি যে ঘরে ঢুকে পড়বেন, ভাবিনি। স্যারকে বললাম চটশিল্পে অর্ডার নেই। তাই কাজ নেই। আমাদের ঘরের হাল খারাপ। পানীয় জল থেকে নিকাশি— কিছুই ভাল নয়।’’ ওই মহল্লারই বাসিন্দা রিষড়া বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। রাহুলকে সপ্রতিভ ভাবেই সে নিজেদের একফালি গেরস্থালি দেখায়। তার কথায়, ‘‘‘নিকাশি, শৌচাগার বেহাল। শ্রমিকরা চটকলে গিয়ে অর্ধেক দিন কাজ পান না। সব শুনে উনি বললেন, কী করা যায় দেখছি।’’

বাজার মন্দা, কাঁচামালের অভাব-সহ নানা সমস্যায় ধুঁকছে রাজ্যের চটশিল্প। ভাগীরথীর দু’পারেই অনেক চটকল বন্ধ। শ্রমিকদের অবস্থার কথা শুনতেই এ দিন ওয়েলিংটন চটকলে আসা রাহুলের। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে জিটি রো়ড ধরে উত্তরপাড়া, কোন্নগর হয়ে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ রিষড়ায় পৌঁছয় রাহুলের কনভয়। রাহুলের সঙ্গে ছিলেন এআইসিসি নেতা সি পি জোশী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। সকাল থেকেই উত্তরপাড়া ও বৈদ্যবাটির মধ্যে যান নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। জিটি রোডে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ওয়েলিংটনের মাঠেই চাঁদোয়ার নীচে অন্তত ২০০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে তাঁদের অবস্থার কথা জেনে নেন রাহুল। স্থায়ী এবং অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য থেকে হাল আমলে কাজ না-থাকা—শ্রমিকেরা শিল্পের হতশ্রী ছবি তুলে ধরেছেন রাহুলের কাছে। তাঁরা জানান, রাহুল কথা দিয়েছেন, সংসদে তাঁদের হয়ে ‘আওয়াজ’ তুলবেন। রাহুলের সঙ্গে কথা বলে মোটের উপরে খুশি শ্রমিকেরা।

ওই চটকলের ‘ওয়াইন্ডিং’ বিভাগের শ্রমিক মতিলাল সরোজ বলেন, ‘‘সাতাশ বছর কাজ করছি। কোনও দিন এত বড় নেতা আমাদের মহল্লায় আসেননি। উনি আমাদের সমস্যা বুঝেছেন।’’ রঞ্জিত সিংহ নামে আর এক শ্রমিক বলেন, ‘‘রাহুলকে জানিয়েছি, এই শিল্পে বেকারত্ব বাড়ছে। চটের ব্যবহার কমছে। উনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।’’

ওয়েলিংটন ছাড়াও লাগোয়া হেস্টিংস ও অন্যান্য চটকলের শ্রমিকরা এ দিন রাহুলকে দেখার জন্য সকাল থেকেই পুলিশের ঘেরা দড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন জ্যৈষ্ঠের রোদ মাথায় নিয়ে। মোড়ে মোড়ে ছিল রাহুলের ছবি-দেওয়া হোর্ডিং, কাগজের শিকলি। তবে কেউ কেউ বলছেন, রাহুলের সফর ঘিরে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীদের চেয়ে চটকল শ্রমিকদের উদ্দীপনাটাই চোখে পড়েছে বেশি।

এ দিন চটকলের ভিতরে সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে রিষড়া ছাড়ার আগে রাহুল নিজেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। কয়েক মিনিট ধরে চলে তুমুল হুড়োহুড়ি। তার পর গাড়িতে ওঠেন রাহুল। কলকাতার দিকে রওনা দেয় তাঁর কনভয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gautam Bandyopadhyay Rishra Prakash Pal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE