তখনও চলছে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
সকাল ৯টা থেকে জগদ্দল ও কাঁকিনাড়া স্টেশনের মাঝের ২৯ নম্বর রেল গেটের কাছে ট্রেন অবরোধ করলেন নফরচাঁদ চটকলের শ্রমিকরা। অবরোধ চলল বেলা ১টা পর্যন্ত। শ্রমিকদের অভিযোগ, আড়াই বছরেরও বেশি বন্ধ রয়েছে এই চটকল। সম্প্রতি মালিকানা বদলের কথা হচ্ছিল। নফরচাঁদ চটকলের মালিক জিরেম ভাই ও দুম্বাসি ভাইয়ের কাছ থেকে এই মিলটির মালিকানা অধিগ্রহণ করার কথা ছিল হাওড়ার হনুমান চটকলের মালিক ভাগচাঁদ জৈনের। কিন্তু এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল টালবাহানা। কারখানা আর খুলবে না এমন আশঙ্কা থেকেই এ দিন সকালে রেল অবরোধ শুরু করেন শ্রমিকরা।
নফরচাঁদ চটকলটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার মালিকানা হস্তান্তরের পর গত দু’মাস ধরে এআই চাঁপদানি গ্রুপের মালিকানায় ছিল। দুম্বাসি ভাই সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় এআই-এর সবকটি চটকলেরই মালিকানা বদল শুরু হয়েছিল। কিছু দিন আগেই এই গ্রুপের ‘অ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়া’ চটকলটির মালিকানা হস্তান্তর হয়। কিন্তু নফরচাঁদের মালিকানা হস্তান্তরের কথা হচ্ছিল অনেক আগে থেকে। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সেই হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বহুবার পিছিয়েছে। মঙ্গলবার ১০ জানুয়ারি দুম্বাসি ভাইয়ের কাছ থেকে ভাগচাঁদ জৈনের হাতে মালিকানা বদলের দিন ধার্য হয়েছিল। কিন্তু কার্যত তা না হওয়ায় শ্রমিকরা বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ কাঁকিনাড়া স্টেশনের কাছে অবরোধ শুরু করেন। রেল লাইনে বসে পড়ে স্লোগান দিতে থাকেন অবরোধকারীরা। শিয়ালদহ মেন লাইনের আপ ও ডাউন-এর দু’টি ট্র্যাকেই ট্রেন চলালচল বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তাহের মধ্যে কাজের দিনে আচমকা এই ট্রেন বন্ধের জেরে বিপদে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। অনেকেই বুঝতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন, অনেকেই সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। ব্যারাকপুর মেন রোডে দিনের এই সময় এমনিতেই যানজট তীব্র থাকে। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ থাকায় ট্রেনের যাত্রীরা সড়কপথে যাওয়ার চেষ্টা করলে সড়কে ভিড় উপচে পড়ে। ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রে জানানো হয়েছে, অফিস টাইমে হঠাৎ করেই ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ট্রাফিক সামলাতে এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড় কেটে নিজের রাস্তা নিজেই বানালেন কেরলের পঙ্গু ‘বোকাবুড়ো’
প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অবরোধ চলার পর অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যান স্থানীয় তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা। ভাটপাড়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রমোদ সিংহ অবরোধ তুলতে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কার্যত তাড়া করা হয় তাঁকে। শ্রমিকদের ক্ষোভ, শাসক দলের কাছে এ নিয়ে আর্জি জানানো হলেও গত আড়াই বছরে তাঁরা কখনও আমল দেননি। ফলে যতক্ষণ না কারখানা খোলার বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানানো হচ্ছে ততক্ষণ অবরোধ চালিয়ে যাওয়া হবে। রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবরোধকারীদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় আলোচনাও চলে।
দু’টি চটকলেরই মালিকপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেন প্রশাসনের কর্তারা। এআই চাঁপদানি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নির্মল পূজারা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই মালিকানা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই নতুন মালিক মিল খোলার ব্যাপারে পদক্ষেপ করবেন বলে আমরা জেনেছি।’’ অন্যদিকে ভাগচাঁদ জৈনের বক্তব্য, কারখানাটির আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া মিটে গিয়েছে। সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে আগামী ১৫ তারিখ কারখানাটি চালু করা হবে। প্রশাসনের কর্তারা বেলা ১টা নাগাদ অবরোধকারী শ্রমিকদের আগামী ১৫ তারিখ কারখানা নতুন করে খোলার বিষয়ে জানালে অবরোধ উঠে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy