Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মথুরায় টাকা হাতিয়ে উধাও দুই বাঙালি

হুবহু সারদা, রোজ ভ্যালির কায়দায় টাকা তোলার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন শ্যামসুন্দর-স্নেহাশিস। ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার জন্য মথুরার আদালত থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে বারবার নির্দেশ আসছে।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

সময়ের অদ্ভুত মিল! নিছক সমাপতন না-হতেও পারে বলে তদন্তকারীদের অভিমত। অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় ২০১৩ সালে কাশ্মীরে গ্রেফতার হচ্ছেন আর সেই সময়েই মথুরা-সহ উত্তরপ্রদেশে বিপুল লাভের টোপ ঝুলিয়ে লোক ঠকিয়ে টাকা তুলছে দুই বাঙালির একটি সংস্থা! শ্যামসুন্দর দে এবং স্নেহাশিস সরকার নামে ওই দুই অভিযুক্ত পলাতক।

হুবহু সারদা, রোজ ভ্যালির কায়দায় টাকা তোলার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন শ্যামসুন্দর-স্নেহাশিস। ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার জন্য মথুরার আদালত থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে বারবার নির্দেশ আসছে। তবে কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, এখানকার অফিসের যে-ঠিকানা দেওয়া রয়েছে, উল্টোডাঙার সেই দফতর দীর্ঘদিন ধরে তালাবন্ধ। কেউ আসেন না। অভিযুক্ত দুই কর্তার বাড়ির ঠিকানা রয়েছে বারাসত থানা এলাকায়। সেখানে লোক পাঠিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। মানিকতলা থানা তদন্তে নেমেছে এবং তদন্তের স্বার্থে সেই থানার এক অফিসার বার কয়েক মথুরা ঘুরেও এসেছেন।

তদন্তকারীরা হতবাক! সারদা, রোজ ভ্যালি নিয়ে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র তদন্ত যখন পুরোদমে চলছে, শ্যামসুন্দর-স্নেহাশিস তখন একই ছকে লোক ঠকিয়ে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ। দু’দফায় দু’টি সংস্থা ফেঁদে মথুরা থেকে ২৫ কোটি এবং আগরা থেকে ৭৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দু’জনেই উধাও হয়ে যান।

মথুরায় জীবন বিমার এজেন্ট হিসেবে ২০ বছর কাজ করছেন জিতেন্দ্র আগরওয়াল। তিনি জানান, গ্রিনটাচ প্রজেক্টস লিমিটেড নামে একটি সংস্থা ২০১৩ সালে মথুরার বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করে। ২০১৬ সালে সেবি-র নির্দেশে সেই সংস্থা গুটিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৩ সালেই জম্মু-কাশ্মীরে গ্রেফতার হন সারদার মালিক সুদীপ্ত। ২০১৪ সালের ৯ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দেশ জুড়ে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে সিবিআই। তবে সেই তদন্ত মূলত সীমাবদ্ধ ছিল পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ত্রিপুরা-সহ কয়েকটি রাজ্যে।

সেই একই সময়ে মথুরায় লোক ঠকানোর ব্যবসা ফেঁদে বসে বাঙালি সংস্থা গ্রিনটাচ। জিতেন্দ্রের অভিযোগ সেবি-র নিষেধাজ্ঞায় গ্রিনটাচ বন্ধ করলেও পরে অন্য নামে সংস্থা খুলে বসেন শ্যামসুন্দর-স্নেহাশিস। লোভে পড়ে জিতেন্দ্র সেই সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি জানান, সারদা, রোজ ভ্যালির মতো ওই সংস্থাও প্রতি মাসে টাকা নিয়ে এক-দুই-তিন বছর বাদে চড়া হারে সুদ-সহ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রকল্প চালু করেছিল। একসঙ্গে মোটা টাকা নিয়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছিল তারা। এই সব প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলে কমিশন হিসেবে ২০১৬-১৭ সালে ২০-২৫ হাজার টাকা পান জিতেন্দ্র।

জিতেন্দ্র বললেন, ‘‘আমার বিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। লোভও। তাই নানা জনের কাছ থেকে টাকা তুলে প্রতি মাসে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জমা দিতে শুরু করি ২০১৭ সালে। এক বছর জমা দেওয়ার পরে ২০১৮ সালের মে মাসে সেই টাকা সুদ-সহ ফেরত পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা ফেরত নিতে গিয়ে দেখি, অফিসে তালা ঝুলিয়ে সকলে পালিয়েছে।’’

পুলিশ, আদালত করলেও সেই টাকা এখনও ফেরত পাননি জিতেন্দ্র। এজেন্ট হিসেবে যে-সব মথুরাবাসীর কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা নিত্যদিন চাপ বাড়াচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forgery Mathura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE