গোয়ালতোড় থেকে মাওবাদী সন্দেহে ধৃত সব্যসাচী গোস্বামী, টিপু সুলতান, অর্কদীপ গোস্বামী, সঞ্জীব মজুমদার।—ফাইল চিত্র।
বিশ্বভারতীতে মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছর ২১ মার্চ বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বভারতী ও ঝাড়খণ্ড থেকে কিছু কিছু মাওবাদী এসে এখানে বসে বসে নানা রকম বদমায়েশি করে।’’ সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে কি না, তা পুলিশকর্তাদের কাছে জানতেও চান।
মঙ্গলবার রাতে গোয়ালতোড়ের কঞ্জিমাকলিতে অভিযান চালিয়ে মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, তাঁদের মধ্যে এক জন বিশ্বভারতীরই প্রাক্তনী হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্য নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতনে। ধৃত সব্যসাচী গোস্বামী, সঞ্জীব মজুমদার, অর্কদীপ গোস্বামী ওরফে বিজয় এবং টিপু সুলতান ওরফে স্বপনকে পুলিশ ন’দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাক্তন মাওবাদীরা কেউ ছিল কিনা, সংগঠনে নতুন লোক নেওয়ার কাজ চলছিল কিনা, কোনও মাথা ছিল কিনা— এ সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ধৃতদের মধ্যে টিপু বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র। বাড়ি শান্তিনিকেতন থানার পশ্চিম গুরুপল্লিতে। ২০১৩ সালে পাঠভবন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও পড়া শেষ করেননি। এখন সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার ছাত্র। বিশ্বভারতীতে পড়ার সময় নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠন এবং মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। টিপুর এক সময়ের সহপাঠীদের একাংশ বলছেন, ‘‘স্রেফ মাওবাদী নথিপত্র সঙ্গে থাকার কারণে পুলিশ কেন তাঁকে ধরল, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এ বার তো বাইরে কোথাও যেতেও ভয় পাব! অর্থনীতির পড়ুয়া কিন্তু সঙ্গে সাহিত্যের বই পেলেই হয়তো পুলিশ ধরে ফেলবে!’’
এপিডিআরের পক্ষে শৈলেন মিশ্রের দাবি, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা সকলের আছে। টিপুরা রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য ওখানে গিয়েছিলেন। ওকে মাওবাদী
সন্দেহে গ্রেফতার করা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক।’’ টিপুর বাবা শেখ কামালউদ্দিন নিজেও বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর আবার দাবি, মানবতার কারণেই গোয়ালতোড়ের ওই এলাকায় কিছু কষ্টে থাকা মানুষের সন্ধান পেয়ে টিপু সেখানে যান।
এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পনা করে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। যেটা ও আগে বুঝতে পারেনি।’’ সিপিআই (এম এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘মোদী সরকার যেমন আতঙ্কিত হয়ে ‘আরবান নকশাল’ খুঁজছে, এখানে মমতার সরকারও ‘রুরাল নকশাল’ খুঁজছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও ধৃতদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’’
পুলিশের যদিও দাবি, জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদী কার্যকলাপে ইন্ধন জোগাতেই গোয়ালতোড়ের জঙ্গল জড়ো হয়েছিলেন ওই চার জন। যেখান থেকে তাঁদের গ্রেফতার
করা হয়, তার পাশেই ভালুকবাসার জঙ্গল। এই জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়ে এক সময় অসিত সরকার, সুদীপ চোঙদারেরা জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর কাজ, পরে কিষেণজি, সিদো সরেনরা মাওবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy