আক্রমণে জখম বন দফতরের আধিকারিকেরা। ছবি: সুমন সাহা
আজমলমারির জঙ্গলে চোরাশিকারিদের ফাঁদে পড়ে রয়্যাল বেঙ্গলের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে শনিবার রাতে মৈপীঠ এলাকার গ্রামে গিয়ে আক্রান্ত হন কিছু বনকর্মী ও অফিসার। রীতিমতো ছক কষে, শাঁখ বাজাতে বাজাতে গ্রামের মহিলাদের সামনে রেখে তাঁদের উপরে আক্রমণ চালানো হয়। বন দফতর, কিছু স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য উঠে আসছে।
বন দফতরের খবর, হামলা হয় মৈপীঠ কোস্টাল থানার গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের পূর্ব গুড়গুড়িয়ার মনসাতলা এলাকায়। বাঘ-হত্যার ঘটনায় অশোক মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিলেন বনকর্মীরা। তাঁকে জেরা করে আরও কয়েক জনের খোঁজ পাওয়া যায়। তাঁদের ধরতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। বনকর্মীদের আসার খবর পেয়ে তত ক্ষণে আক্রমণের ছক কষে ফেলেছে বাসিন্দাদের একাংশ। শাবল, হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয় বনকর্মী ও অফিসারদের। আহত হন জেলা বন আধিকারিক, চিতুরি ও ঝড়খালির বিট অফিসার-সহ বেশ কয়েক জন।
মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে রবিবার সকালেই এলাকায় তল্লাশি শুরু করে কোস্টাল থানার পুলিশ। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি কেউ। পুলিশ জানায়, হামলার পরে বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ফাঁকা পড়ে আছে সব বাড়ি। মোবাইল ফোন বাড়িতে রেখে গিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘গ্রামের সকলেই জঙ্গলে কাঠ কেটে, নদীতে মাছ ধরে জীবন যাপন করেন। জঙ্গল ওঁদের মতো কেউ চেনেন না। সকলেই গভীর জঙ্গলে চলে গিয়েছেন। ওখানে পুলিশ ওঁদের খুঁজে পাবে না।’’
আশেপাশের গ্রামের কিছু বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাঘের মৃত্যুর পরে বনকর্মীদের তৎপরতা শুরু হয়েছিল। পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল ওই এলাকাবাসীর। বনকর্মীদের আসার খবর পেয়ে তাঁদের আটকে দেওয়ার ছক কষা হয়। বনকর্মীরা বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে এগোতেই এগিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের মহিলাদের। পিছন থেকে তাঁদের পরিচালনা করেন পুরুষেরা। প্রায় প্রত্যেকের হাতেই ছিল দা, হাঁসুয়া, শাবল। শ’খানেক মহিলা ছিলেন বলে জানান এক বনকর্মী। শঙ্খধ্বনি দিতে দিতে তাঁরা আক্রমণ করেন বনকর্মীদের দলটিকে।
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলার পরে এলাকার কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার জখম বনকর্মীদের উদ্ধার করেন। পুলিশ আহতদের প্রথমে জামতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের ইএম বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বনকর্মী দলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বন আধিকারিক জি আর সন্তোষ। এ দিন হাসপাতালে তিনি বলেন, ‘‘ধৃত অশোক মণ্ডলকে জেরা করে কয়েক জনের কথা জানা যায়। তাঁদের ধরতে যেতেই আক্রমণ করা হয়। অন্ধকারের মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথায় কুড়ুল দিয়ে মারতে যায় এক জন। মাথা সরিয়ে নিতেই ডান চোখের উপরে পড়ে কুড়ুলের ঘা।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বনকর্মীদের উপরে ক্ষোভ কিসের?
স্থানীয় এসইউসি নেতা সুদর্শন মান্না বলেন, ‘‘হয়তো দু’-এক জন চোরাশিকারের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বন দফতর তাঁদের খুঁজতে গোটা গ্রামকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বারবার একে-ওকে ডেকে পাঠাচ্ছে। গ্রামে তল্লাশি চালাচ্ছে। গ্রামের ছেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতেই মা-বোনেরা বিরক্ত হয়ে বনকর্মীদের আক্রমণ করেছেন।’’
স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা পিন্টু মণ্ডলের বক্তব্য, ওই এলাকার একাধিক লোকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চোরাশিকারের অভিযোগ শোনা গিয়েছে। কিন্তু ধরা যায়নি। ‘‘এখন আবার সরকারি কর্মীদের এ ভাবে মারধর করার ঘটনা ঘটল। দ্রুত দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি,’’ বলেন পিন্টুবাবু। বন দফতরের খবর, বাঘ-হত্যায় এ-পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৈপীঠের বাসিন্দা অনন্ত সাউ, মঙ্গল বেরা ও তাঁর স্ত্রী এবং বিমল দাস ও তাঁর স্ত্রী এখনও ফেরার। ওঁদের আত্মীয়েরাই শনিবার রাতে বনকর্মীদের আক্রমণ করে। ২০ জনের বিরুদ্ধে কোস্টাল থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy