Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রমাণে ঘাটতির ফাঁকেই জামিন রজতের

সিবিআই গুরুতর ধারা যোগ না-করায় আলিপুর জেলা আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। এ বার তদন্তকারী সংস্থা আদালতে জোরালো প্রমাণ দেখাতে না-পারায় সারদা মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে গেলেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার। সোমবার বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৩৯
Share: Save:

সিবিআই গুরুতর ধারা যোগ না-করায় আলিপুর জেলা আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত সাংসদ সৃঞ্জয় বসু। এ বার তদন্তকারী সংস্থা আদালতে জোরালো প্রমাণ দেখাতে না-পারায় সারদা মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে গেলেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার। সোমবার বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে এই প্রথম কোনও অভিযুক্তকে জামিন দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিনই প্রথম হাইকোর্টে জামিনের আর্জি জানান রজতবাবুর আইনজীবীরা। ডিভিশন বেঞ্চ তা মঞ্জুর করার পরে সিবিআই আবেদন জানায়, জামিনের নির্দেশ সাত দিন স্থগিত রাখা হোক। সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত।

সারদা মামলায় নিম্ন আদালতে প্রথমে জামিন পেয়েছেন সৃঞ্জয়বাবু। এ দিন রজতবাবুর জামিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি কে রাঘবচারুলু আদালতকে জানান, এ ভাবে জামিন দিলে অন্য অভিযুক্তেরা একই ভাবে জামিন চাইতে পারেন। এই জামিনের নির্দেশ সমাজের কাছে কী বার্তা বয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটাও বিচারপতিদের ভেবে দেখার আর্জি জানান তিনি।

বিচারপতিরা জানান, এই মামলায় জামিনের জন্য সকলের আর্জি একই ভাবে বিচার না-ও করা হতে পারে।

সিবিআই সূত্রের খবর, সৃঞ্জয়বাবুর জামিন খারিজ করার জন্য ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। এ বার রজতবাবুর জামিন খারিজের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। “আদালতের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র খতিয়ে দেখেই এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,” বলেছেন সিবিআইয়ের মুখপাত্র কাঞ্চন প্রসাদ।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ রজতবাবুর মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। তাঁর হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র, মিলন মুখোপাধ্যায়, জয়দীপ কর, বিল্বদল ভট্টাচার্য ও ময়ূখ মৈত্র আদালতে জানান, রজতবাবু ১৬০ দিন ধরে জেলে আছেন। ১৭ নভেম্বর আলিপুর আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করা হয়েছে। এর পরেও তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না কেন?

জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করতে উঠে সিবিআইয়ের আইনজীবী রাঘবচারুলু জানান, রজতবাবু বাজার থেকে সারদার টাকা তোলার বিষয়টি দেখতেন। টাকা তোলার ক্ষেত্রে তিনি নিজের প্রভাবও বিস্তার করেছিলেন। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলি। বিচারপতিরা সেই প্রমাণ দেখতে চান। তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী অবশ্য তা দেখাতে পারেননি। তবে তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, তদন্ত এখনও চলছে। চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়ার সময় সেই সব তথ্যপ্রমাণ দাখিল করা হবে।

সিবিআই জানায়, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাসিক ১০ লক্ষ টাকা বেতনে রজতবাবু সারদায় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। যদিও সেই চুক্তি কার্যকর হয়েছিল ২০১১ সালের জুন থেকে। সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি টাকা তোলার বিষয়টি দেখাশোনা করতেন। ২০০৮ সালে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে অবসর নেওয়া রজতবাবু বারবার নিজেকে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলেও দাবি করে এসেছেন। শুধু তা-ই নয়, সিবিআইয়ের দাবি, রজতবাবু সারদার প্রেসিডেন্ট থাকার সময়েই ওই সংস্থার আমানত সংগ্রহ তুঙ্গে উঠেছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনেই সিবিআই এ দিন আদালতে জানায়, রজতবাবুকে জামিন দেওয়া হলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। তথ্যপ্রমাণও নষ্ট করতে পারেন। কিন্তু সিবিআইয়ের এই সওয়ালে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। বরং চারটি শর্ত রেখে রজতবাবুর জামিন মঞ্জুর করে ডিভিশন বেঞ্চ।

জামিনে থাকাকালীন কী কী শর্ত পালন করতে হবে রজতবাবুকে?

• এক লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড রাখতে হবে।

• রজতবাবু কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না।

• তাঁর পাসপোর্ট নিম্ন আদালতের কাছে জমা রাখতে হবে।

• তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সপ্তাহে এক বার সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে হবে।

রজতবাবুর জামিনের পরে আইনজীবী মহলে নানান জল্পনা শুরু হয়েছে। আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, সাংসদ কুণাল ঘোষও দীর্ঘদিন ধরে জেলে বন্দি। তাঁর বিরুদ্ধেও সিবিআই চার্জশিট দাখিল করেছে। তবু তিনি হাইকোর্টে জামিন পাননি। নিম্ন আদালত থেকে সৃঞ্জয়বাবু এবং হাইকোর্ট থেকে রজতবাবু জামিন পাওয়ায় কেলেঙ্কারির তদন্ত নিয়েই সন্দেহ দানা বাঁধছে। এ বিষয়ে পরবর্তী কালে আদালতে সিবিআইয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন ওই আইনজীবীরা।

সিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। প্রয়োজন মতো তথ্যপ্রমাণ দাখিল করা হবে। “জামিন পেলেই কারও দোষ কম হয়ে যায় না,” বলেন এক সিবিআই-কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE