রাজীব কুমার।—ফাইল চিত্র।
এ এক অন্য রাজীব কুমার।
তাঁর বাড়িতে সিবিআইয়ের আকস্মিক হানা এবং শিলংয়ে তাঁকে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে চর্চা চলছে বেশ কয়েক দিন ধরে। বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে সমালোচনার জেরে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে সহকর্মী এবং তাঁদের পরিবারকে। সেটা অজানা ছিল না কলকাতার পুলিশ কমিশনারের। তাই শিলং থেকে ফিরেই মাসিক ক্রাইম বৈঠক ডেকে সহকর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন রাজীব। লালবাজারের খবর, সিপি হিসেবে বাহিনীর ওই সদস্যদের সঙ্গে রাজীবের শেষ বৈঠক সম্ভবত এটাই।
পুলিশি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলিপুর বডিগার্ড লাইনের ওই বৈঠকে শহরের অপরাধ নিয়ে আলোচনার পরে থানার ওসি, এসি এবং অন্য কর্তাদের সামনে রাজীব জানান, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অনেক কিছু লেখা হয়েছে। তাতে অপ্রস্তুত হতে হয়েছে বাহিনীর সদস্যদের। এর জন্য বাহিনীর সদস্যদের পরিবার-সহ সকলের কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। শুক্রবার ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি-সহ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও দুঃখ প্রকাশ করেন সিপি রাজীব বরাবরই ‘বাহিনীর সদস্য’ হিসেবে পরিচিত। বাহিনীর নিচু তলার কেউ বিপদে পড়লে বা কারও প্রয়োজনে বরাবর পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার তাঁর ১০ মিনিটের বক্তৃতা নতুন রাজীবকে সামনে এনেছে বলে মনে হয়েছে সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্তাদের। পুলিশকর্মীদে পরিবারও প্রশংসা করেছেন সিপি-র ভূমিকার।
সারদা তদন্ত শুরু হয়েছিল রাজীবের হাত ধরেই। কাশ্মীর থেকে তিনিই গ্রেফতার করে আনেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে। সেই তদন্তের জন্য গঠিত সিটের অন্যতম কর্তা হন তিনি। পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যেতেই তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ওঠে। সিবিআই তাঁকে বারবার ডেকে পাঠালেও তিনি তাদের সামনে হাজির হননি বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ বিজেপি নেতার মেয়েকে
৩ ফেব্রুয়ারি সিবিআইয়ের একটি দল রাজীবের লাউডন স্ট্রিটের বাড়িতে যায়। অভিযোগ, পুলিশ অফিসারেরা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে সিবিআইয়ের লোকেদের থানায় নিয়ে যান। সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই। আদালত নির্দেশ দেয়, শিলংয়ে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হবে রাজীবকে। সেখানে পাঁচ দিন ধরে সিবিআইয়ের প্রশ্নের জবাব দেন রাজীব।
সাম্প্রতিক কালে কলকাতার অন্য কোনও সিপি-কে সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়তে হয়নি। বাহিনীর প্রধানকে জেরার খবর প্রচারিত হওয়ার পরে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সদস্যদের। অপ্রীতিকর প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁদের। এতে যে বাহিনীর মনোবলে চিড় ধরতে পারে, সেটা আন্দাজ করেই সিপি সকলের সামনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে পুলিশের একাংশের অভিমত।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা নিয়ে উঠছে যে যে প্রশ্ন
বাহিনীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সুখকর বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন সিপি। জানান, বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি গর্বিত। রাজীব জানান, ২৭ বছর পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কারারক্ষীদের প্রশ্নের জবাবে নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, কারাজীবনের কষ্টকর অভিজ্ঞতা নিয়ে নয়, বাকি জীবনটা তিনি কাটাতে চান সুখকর স্মৃতি নিয়েই। পুলিশের একটি অংশ জানায়, কমিশনারও বাহিনীর কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতা মনে না-রেখে ভালটা নিয়ে বিদায় নিতে চেয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy