Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

রাজেশ কোনও মতে বলল, আমাকে বাঁচা!

একটু দূর থেকেই দেখছিলাম আমরা। পড়ুয়াদের অবরোধ তুলতে গিয়ে আচমকা ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয় পুলিশ। কেন যে গোলমাল বাধল, বুঝতে পারছিলাম না। এর মধ্যেই পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে। বোমাবাজিও শুরু হয়ে যায়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এদিক ওদিক থেকে ইট-পাথর পড়তে শুরু করে। মুহূর্তে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে স্কুল লাগোয়া চত্বর। 

জখম: ইসলামপুর হাসপাতালে কৃপানাথ সরকার। নিজস্ব চিত্র

জখম: ইসলামপুর হাসপাতালে কৃপানাথ সরকার। নিজস্ব চিত্র

কৃপানাথ সরকার
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share: Save:

আমাদের পাশেই রাজেশ সরকারের বাড়ি। সম্পর্কে ও আমার কাকা। স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গোলমাল হচ্ছে শুনে বেলা আড়াইটে নাগাদ আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। তখন অবরোধ, আন্দোলন চলছে। ওই স্কুলে আমার ভাইবোন দু’জনেই পড়ে। তাই আমরাও গোলমাল হচ্ছে শুনে দেখতে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে হঠাৎই বেপরোয়া হয়ে ওঠে পুলিশ।

একটু দূর থেকেই দেখছিলাম আমরা। পড়ুয়াদের অবরোধ তুলতে গিয়ে আচমকা ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয় পুলিশ। কেন যে গোলমাল বাধল, বুঝতে পারছিলাম না। এর মধ্যেই পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে। বোমাবাজিও শুরু হয়ে যায়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এদিক ওদিক থেকে ইট-পাথর পড়তে শুরু করে। মুহূর্তে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে স্কুল লাগোয়া চত্বর।

আমরা তখন বাঁচতে দৌড়চ্ছি নিরাপদ জায়গার দিকে। এরই মধ্যে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে পুলিশ। শুরু হয়েছে লাঠিচার্জ। তখনই শুনলাম গুলির শব্দ। কোথা থেকে গুলি ছুটছে, বুঝতে সময় লাগল কয়েক মিনিট। তখনই দেখলাম, আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়েছে রাজেশ।

আরও পড়ুন: অত দূরেও কেন গুলি লাগল, প্রশ্ন

এর ছুটে গেলাম ওর কাছে। বুক-পেটের কাছে চাপ চাপ রক্তে জামা ভিজে গিয়েছে ওর। আমি মাথাটা তুলে নিলাম কোলে। ও তখন জ্ঞান হারাচ্ছে। তার মধ্যেই কোনওক্রমে বলল, আমাকে বাঁচা! বুঝতে পারছিলাম না, কী করব। নিজের মাথা চেপে আমিও সম্ভবত আর্তনাদ করে উঠেছিলাম। রাজেশের অবস্থা তখন দ্রুত খারাপ হচ্ছে। আমি তখন চিৎকার করতে শুরু করেছি, কে আছ, রাজেশকে বাঁচাও। তখনই দেখলাম ওর বাবা নীলকমল সরকার ছুটে আসছেন।

ওই গোলমালের মধ্যে ওকে কী ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাব, সেই চিন্তাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক জন চেনা একটি ট্রেকারের চালককে ফোন করল। সে আসতে কিছু ক্ষণ। এক এক মিনিটকে তখন মনে হচ্ছে এক এক ঘণ্টা। ট্রেকারে রাজেশকে চাপিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। তখন আর এক বিপত্তি। কিছু অচেনা লোক আমাদের উপরে হামলা চালায়। ঢিল ছোড়ে। আমার মাথায়ও ঢিল লাগে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আমিও কাতরাতে থাকি। সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই রাজেশ আর আমাকে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করান।

রাজেশের গুলি লেগেছে। আমার চেয়েও ওকে নিয়ে বেশি চিন্তা (রাজেশ মারা গিয়েছে— এ দিন তাঁর সঙ্গে কথা বলা পর্যন্তও জানানো হয়নি কৃপানাথকে)। ও কেমন আছে, বলতে পারেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Help Firing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE