মমতা এবং রাজনাথের মধ্যে মিনিটি কুড়ি কথা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।– নিজস্ব চিত্র।
বাংলার বিজেপি নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বসলেন রাজনাথ সিংহ। সোমবার নবান্নে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে চলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেম্বারে। মিনিট কুড়ির বৈঠক সেরে নবান্ন ছাড়লেন রাজনাথ। কিন্তু বেরনোর সময়ে ওই বিশেষ বৈঠক নিয়ে আর কোনও কথা তিনি বলেননি।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ নবান্নের সভাঘরে শুরু হয় পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ওই বৈঠকে ছিলেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ সিংহ, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী, ওড়িশার অর্থমন্ত্রী শশিভূষণ বেহেরা।
প্রায় পৌনে ২টো পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকটি চলে। তার পরে সবাই মিলেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, রাজ্যগুলিকে কোন কোন বিষয়ে কী ধরনের নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, সে সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেন রাজনাথ। তার ফাঁকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ প্রশংসা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকটির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রকম আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনা করেছেন, রাজনাথ সিংহ তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন: নবান্ন থেকে সারদার ফাইল তলব করল সিবিআই
আরও পড়ুন: আজ থেকে টু-হুইলারের টোল লাগবে না দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে
মোদীর সঙ্গে মমতার বা মোদী সরকারের সঙ্গে মমতা সরকারের সম্পর্ক এখন যে রকম এবং তৃণমূল-বিজেপির টানাপড়েন এখন যে পর্যায়ে, তাতে এই সময়ে রাজনাথের মতো কেউ মমতার এমন ভূয়সী প্রশংসা করলে, সে প্রশংসার তাৎপর্য অন্য রকম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতই এ রকম। রাজনাথের মুখে মমতার এই দরাজ সুনাম যে বাংলার বিজেপি নেতাদের অস্বস্তিও অনেকখানি বাড়াল, তা নিয়েও কোনও সংশয় নেই।
কিন্তু অস্বস্তি সেখানেই শেষ হয়নি। রাজনাথ কলকাতায় আসছেন এবং পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে বৈঠক করতে চলেছেন— এই খবর প্রকাশ্যে আসা থেকেই রাজনাথ-মমতার একান্ত আলাপচারিতার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ দিন সেই জল্পনা বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠক এবং তার পরে সাংবাদিক বৈঠক সেরেই রাজনাথ সিংহ এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেম্বারে চলে যান। মমতাই সঙ্গে করে নিয়ে যান রাজনাথকে। সেখানেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত আলাপচারিতা হয় বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
দুপুর ২টো নাগাদ মমতার চেম্বারে যান রাজনাথ। ২টো ২৫ নাগাদ আবার দু’জনেই নীচে নেমে আসেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আবার উপরে উঠে যান মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের উপরের তলায় ওঠা এবং নেমে আসার সময়টুকু বাদ দিলে রাজনাথ-মমতার মধ্যে মিনিট কুড়ি আলাদা করে কথা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু কী বিষয়ে কথা হল, নবান্ন ছাড়ার সময়ে তা নিয়ে মুখ খোলেননি রাজনাথ। প্রকাশ্যে কিছু জানাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে যখন সঙ্ঘাতের আবহ, বাংলায় তৃণমূল এবং বিজেপির লড়াই যখন ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে, তখন রাজনাথ সিংহের মতো শীর্ষ বিজেপি নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন একান্ত আলাপচারিতায় গেলেন? প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক শিবিরেই। অস্বস্তি ঢাকতে বিজেপি রাজধর্মের কথা বলতে শুরু করেছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘এই বৈঠকে বিজেপির অস্বস্তি বাড়ার তো কিছু নেই। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। প্রশাসনিক বা সরকারি বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা বা কথা তো হতেই পারে। কথা না হওয়াই তো অস্বাভাবিক।’’ কিন্তু পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকে যাঁরা এলেন, তাঁদের কারও সঙ্গে আলাদা করে কথা হল না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠক হল। এর কি কোনও বিশেষ তাৎপর্য নেই? কী নিয়ে কথা হল দু’জনের? বিজেপি মুখপাত্রের জবাব, ‘‘কোনও বিশেষ তাৎপর্য নেই। কী নিয়ে কথা হল, তা-ও আমাদের জানা নেই। জানার কথাও নয়। কারণ রাজনাথ সিংহ যেমন আমাদের দলের নেতা, তেমন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলবেন কি না, কী নিয়ে কথা বলবেন, তা আমাদের জানার কথা নয়। আমরা জানার চেষ্টাও করিনি। বৈঠকের আগে হোক বা পরে, এ বিষয়ে আমরা রাজনাথজির সঙ্গে কোনও কথা বলিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy