Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অশোকনগরে রাজনাথ

সারদার কথা নেই, ভোটে দেদার বাহিনীর আশ্বাস

আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিলেন। আইনশৃঙ্খলা থেকে শিল্প, কর্মসংস্থান থেকে উন্নয়ন— অনেক কিছু নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্তর সমালোচনা করলেন। এমনকী ভোটে দেদার কেন্দ্রীয় বাহিনী মেলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিতর্কও বাধালেন।

অশোকনগরে বিজেপির সভায় রাজনাথ সিংহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ প্রমুখ। বৃহস্পতিবার নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

অশোকনগরে বিজেপির সভায় রাজনাথ সিংহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ প্রমুখ। বৃহস্পতিবার নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিলেন। আইনশৃঙ্খলা থেকে শিল্প, কর্মসংস্থান থেকে উন্নয়ন— অনেক কিছু নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্তর সমালোচনা করলেন। এমনকী ভোটে দেদার কেন্দ্রীয় বাহিনী মেলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিতর্কও বাধালেন। কিন্তু রাজ্যে ঝটিকা সফরে এসে দলের কর্মীদের একটা বড় অংশকে হতাশ করে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ!

অথচ মাত্রই দু’বছর আগের কথা। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে লোকসভা ভোটের আগে তখন উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বিজেপির তাবড় নেতারা

সারদা নিয়ে গলা ফাটিয়েছেন প্রতিটি সভায়। মোদীর হুঁশিয়ারি ছিল, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে সারদায় সুবিধাভোগীদের সাজা হবে। পরবর্তী কয়েক মাস ধরে সারদা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এক রকম নিয়ম করে হুঙ্কার ছাড়তেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহরা। কিন্তু ওই পর্যন্তই! ধীরে ধীরে বিজেপি নেতাদের গলা থেকে সারদা-শব্দ মিলিয়ে গিয়েছে। ইদানীং অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখনই এ রাজ্যে এসেছেন, সারদা কাণ্ড নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। আজ অশোকনগরের হরিপুর মাঠে জনসভায় দাঁড়িয়ে সেই পথে হাঁটলেন রাজনাথও।

গত কয়েক দিনে সিবিআই শতাব্দী রায়, বিবেক গুপ্ত-সহ তৃণমূলের একাধিক নেতা-সাংসদকে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার নিয়ে তদন্তের স্বার্থে সিবিআই নোটিস দিয়েছে। এমন সময়ে রাজ্যে এসে সারদা প্রসঙ্গে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রা না কাড়ায় সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা হতাশ। যদিও রাজ্য বিজেপির একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, তাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে রাজনাথের সঙ্গেই তৃণমূল নেত্রীর সম্পর্ক বরাবর মসৃণ।

সারদায় সিবিআই তদন্তে ‘মোদীভাই-দিদিভাই বোঝাপড়া’ নিয়ে বিরোধীরা বেশ কিছু দিন ধরেই সরব। রাজ্যে এসেও সারদা প্রসঙ্গে রাজনাথের নীরবতাকে কটাক্ষ করে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম এ দিনই বাদুড়িয়ায় এক সভায় বলেন, ‘‘দিল্লিতে বিল পাসের জন্য মোদীর দরকার মমতাকে। চিটফান্ড কাণ্ড থেকে উদ্ধার পেতে মমতার দরকার মোদীকে। চিট ফান্ড কাণ্ডে বাঁচার রাস্তা খুঁজতে এখন মোদীর কাছে আসতে চাইছেন মমতা!’’

এ দিন সারদা নিয়ে রাজনাথ নীরব থাকলেও সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, রাহুল সিংহরা সরব ছিলেন। সিদ্ধার্থনাথের কথায়, ‘‘মমতা এখন প্রধানমন্ত্রীকে গুজরাতি নববর্ষে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। অথচ লোকসভা ভোটের আগে কোমরে দড়ি পরাবেন বলেছিলেন!’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এখন সিবিআই, রোজভ্যালিতে ওঁর দলের লোকেরা ফেঁসে গিয়েছে! সিবি‌আই নিরপেক্ষ তদন্ত করছে। ওঁদের লোকজনকে নোটিস দেওয়া হচ্ছে। এর পরেই ওঁর শিষ্টাচারের কথা মনে পড়েছে!’’

তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জনতাকে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিয়ে গেলেন রাজনাথ। মমতার সরকার রাজ্যে পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করে তাঁর বক্তব্য, আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রকৃত উন্নয়নের জন্য বিজেপিকেই জেতানো দরকার। কিন্তু রাজ্যে গত পঞ্চায়েত থেকে পুরভোটে শাসক দলের গা-জোয়ারির ব্যাপারটা যে তিনি মাথায় রেখেছেন, তা মনে করিয়ে দিয়ে রাজনাথ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কথা দিয়ে যাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকে বলব, এ রাজ্যে যত কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার তার ব্যবস্থা হবে।’’ ভোটারদের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘‘আপনারা শুধু সাহসের সঙ্গে ভোটটা দেবেন।’’ প্রত্যাশিত ভাবেই শাসক দল তো বটেই, বিরোধী বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বও তাঁর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন।

তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের অভিযোগ, রাজনাথ রাজনৈতিক সভা থেকে রাজ্যকে হুমকি দিয়েছেন। আর ভোটে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথা বলে রাজনাথ ‘অসাংবিধানিক’ কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দলীয় মঞ্চ থেকে রাজনাথ কেন বাহিনীর আশ্বাস দিয়েছেন?’’ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানও মনে করেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন চাইলে কেন্দ্র বাহিনী দিতে বাধ্য।’’ সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের বক্তব্যও একই। সেই সঙ্গেই রাজনাথের গলায় তৃণমূলের সমালোচনা প্রসঙ্গে সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল-বিজেপি-র সম্পর্ক ব্লো হট, ব্লো কোল্ড! সামনে সংসদ বসছে। তৃণমূলকে একটু চাপে রাখলেন রাজনাথ। যাতে সংসদে তারা বেশি বিরোধিতা না করে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE