Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আসছেন রাজনাথ, কাউকে পাঠাবেন না মমতা

মঙ্গলবার দু’দিনের রাজ্য সফরে আসা রাজনাথ সিংহের সঙ্গে সম্ভবত দেখা করছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের খবর শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, জেলাশাসক বা জেলা পুলিশ সুপারেরাও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন না। তাঁর সফরসঙ্গীও হতে পারবেন না। স্বরাষ্ট্র দফতর এ কথা জানিয়েও দিয়েছে কেন্দ্রকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

মঙ্গলবার দু’দিনের রাজ্য সফরে আসা রাজনাথ সিংহের সঙ্গে সম্ভবত দেখা করছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের খবর শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, জেলাশাসক বা জেলা পুলিশ সুপারেরাও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন না। তাঁর সফরসঙ্গীও হতে পারবেন না। স্বরাষ্ট্র দফতর এ কথা জানিয়েও দিয়েছে কেন্দ্রকে।

শুক্রবার রাজনাথের সফরের বিষয়ে নবান্নকে জানানো হয়। মঙ্গলবার তিনি কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে সন্ন্যাসীহাট ছিটমহল সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করবেন। স্থলসীমা চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি সংসদে উত্থাপনের আগে ছিটমহল সংলগ্ন অঞ্চল সরেজমিন দেখতে চান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পরে কলকাতায় ফিরে বুধবার সুন্দরবনের ভাসমান সীমান্ত আউটপোস্ট ও পেট্রাপোল সীমান্ত ঘুরে দেখার কথা তাঁর।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে রীতি অনুযায়ী রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীরাই সাধারণত হাজির থাকেন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীই এই দফতরের দায়িত্বে)-ও তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এর আগে ২০১৩-র ফেব্রুয়ারিতে ইউপিএ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে রাজ্য সফরে এসে সুন্দরবনের ভাসমান সীমান্ত আউটপোস্ট দেখে যান। সে সময়ে রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদাধিকারীরা তো তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেনই, ফ্রেজারগঞ্জে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সরকারি সূত্রের খবর, সীমান্ত সমস্যা থেকে রাজ্যের সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা সব বিষয় নিয়েই কথা হয়েছিল তাঁদের। সে সময়ে দার্জিলিঙ্গের পাহাড় উত্তপ্ত ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনে। পাহাড় সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয় মমতা-শিন্দের।

তা হলে এ বার রাজনাথের সফরে ব্যতিক্রম কেন?

নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, শুক্রবার রাজনাথের সফর ও সফরসূচির বিষয়টি জানানো ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কোনও কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্য সরকারকে বলা হয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত আলিপুরদুয়ার সফর পিছোচ্ছে না। কেন্দ্রকে সে কথা জানানোর পাশাপাশি রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর এ-ও জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য জুড়ে পুরভোটের আচরণবিধি বলবৎ থাকায় সরকারের শীর্ষ আমলা ও পুলিশ অফিসারেরাও রাজনাথের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। তা ছাড়া তাঁরা ভোটের কাজেও ব্যস্ত থাকবেন।

নবান্ন কর্তাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যে এলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনের মাথাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে আলোচনায় ডাকার প্রয়োজন পড়ে না। তা ছাড়া দলীয় কর্মসূচিতে নয়, রাজনাথ আসছেন পুরোপুরি সরকারি সফরে। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় না-থাকলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন, সেখানেও তাঁর সঙ্গে দেখা করে নেওয়া যেত। এর আগেও রাজ্য সফরে আসা শিন্দের সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন কলকাতার বাইরে।

কিন্তু শনিবার নবান্ন থেকে বেরোনোর সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজনাথ সিংহ আসছেন। অনেক দেরি করে আমাদের জানানো হয়েছে। আগে থেকে আমার আলিপুরদুয়ার সফর ঠিক থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছে না।”

বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রের সঙ্গে কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ রেখেছিলেন মমতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যে এলে সরকার ও প্রশাসন তাঁদের এড়িয়ে চলত। বাজেট ও নীতি আয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও রাজ্য কোনও প্রতিনিধি পাঠায়নি। রেল বাজেটে রাজ্যের চাহিদা জানতে চেয়ে রেল মন্ত্রক থেকে পাঠানো চিঠিরও জবাব দেয়নি নবান্ন। কিন্তু সম্প্রতি কৌশল পরিবর্তন করে দিল্লি গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনাও হয়। কেন্দ্রও ইতিবাচক সাড়া দেয়। মমতার দাবি মেনে ঋণ মকুবের ব্যবস্থা না-করা হলেও বাজেটে কেন্দ্র বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য।

তা হলে রাজনাথের আসন্ন সফরে ফের পুরনো ‘ঠান্ডা লড়াই’ ফিরিয়ে আনা কেন? তৃণমূল সূত্রে এর জবাব দেওয়া হয়েছে। পুরভোটের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সরকারি সফরের পেছনে রাজনীতির গন্ধই পাচ্ছে শাসক দল। মনোনয়ন ও প্রচার নিয়ে সর্বত্র সংঘর্ষের যে সব অভিযোগ বিজেপি করছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সে বিষয়টি তুলে রাজনাথ রাজনীতি করতে পারেন বলে তারা আশঙ্কা করছে। তাই ভোটের মুখে তাঁর সঙ্গে বৈঠক এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী উচিত কাজ করছেন বলেই দল মনে করছে।

আর আমলা ও পুলিশ-কর্তারা? নবান্নের এক কর্তার কথায়, খোদ মুখ্যমন্ত্রী যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এড়িয়ে চলতে চান, তখন তাঁকে স্বাগত জানানো বা সফরসঙ্গী হওয়ার ঝুঁকি কে-ই বা নিতে চাইবেন। তাই ভোটের আচরণবিধির বাহানা তুলে তাঁরা প্রচলিত রীতিটাকেই ভাঙলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE