নিজাম প্যালেসে রাকেশ আস্থানা। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রভাবশালীর যোগ নেই, এমন অর্থ লগ্নি সংস্থার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত চার্জশিট দ্রুত জমা দিতে হবে। সারদা এবং রোজ ভ্যালি ছাড়াও অন্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ দ্রুত জোগাড় করতে হবে। আর দু’সপ্তাহের মধ্যে নারদ তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠাতে হবে— এই ছিল সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানার দু’দিনের কলকাতা সফরের ফলাফল। নারদ কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি দীর্ঘক্ষণ তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর। এ ক্ষেত্রে তদন্ত নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন আস্থানা। প্রসঙ্গত, অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে হাইকোর্টে ওই মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে এসে বুধবার বিকেলে ফিরে গিয়েছেন আস্থানা। সিবিআই সূত্রের খবর, অর্থলগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন আস্থানা। ১০ থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট পেশ করার জন্য অফিসারদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন কয়েকটি মামলার আইনজীবী বদলেরও। নিজাম প্যালেস ও সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে অফিসারদের নিয়ে বৈঠকের সময়ে বিভিন্ন পরামর্শও দিয়েছেন। দু’সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি তিনি আশা করছেন বলেও তদন্তকারী অফিসারদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। আস্থানা জানিয়েছেন, প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগ নেই এমন সংস্থার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত চার্জশিট দিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের দায়িত্বমুক্ত করতে হবে। তাঁদেরই প্রভাবশালী-জড়িত অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তে সামিল করা হবে।
দেড় বছর চুপচাপ থাকার পরে এখন লোকসভা ভোটের মুখে দ্রুত নিজেদের ‘তৈরি’ রাখতে চাইছে সিবিআই, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। পাখির চোখের মতো এখন নির্দিষ্ট কিছু ‘প্রভাবশালী’-র বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ প্রস্তুত রাখতে চাইছে তারা। যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ‘প্রয়োজনে’ কাজে আসতে পারে। এই ‘আশঙ্কা’ প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই চক্রান্তের অভিযোগ এনেছে রাজ্যের শাসক দল।
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআইকে তদন্তে নামার নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছিল, ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ খুঁজে বার করতে। চার বছর পরে, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এখন সেই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের সপক্ষে প্রামাণ্য নথি জোগাড়ে নেমেছে সিবিআই। সারদা, রোজ ভ্যালির সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগ ইতিমধ্যেই আদালতে পেশ করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েকজন প্রভাবশালীকে। তুলনায় ছোট, আরও কয়েকটি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গেও প্রভাবশালীদের প্রাথমিক যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: কমিটির বৈঠকে না এসেই হাজিরা খাতায় সই! অনিয়ম ধরলেন স্পিকার
এই সমস্ত যোগাযোগগুলোকে এক সূত্রে বেঁধে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের’ পক্ষে সিবিআই আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ তৈরি রাখতে চাইছে বলে একাংশের দাবি। আবার অন্য এক রাজনৈতিক অঙ্কের কথা মাথায় রেখে, ‘ধীরে চলো’-র বার্তা দিতেই আস্থানাকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল বলে মনে করছে অন্য মহল।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে আস্থানার সঙ্গে ছিলেন পূর্বাঞ্চলে সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব। বুধবার সকালে আস্থানা সস্ত্রীক প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসের সল্টলেকের বাড়িতেও গিয়েছিলেন। সিবিআই সূত্রের খবর, ১৯৯৭ সালে বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলার সময় সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা ছিলেন উপেনবাবু। ওই মামলায় তাঁর অধস্তন হিসেবে কাজ করেছিলেন আস্থানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy