Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সব কনভেন্ট ও হস্টেলেই কড়া নিরাপত্তার দাবি

রানাঘাটের কনভেন্টে ঢুকে লুঠতরাজ ও এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সমস্ত কনভেন্টের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার দাবি জানিয়েছে খ্রিস্টানদের মিলিত সংগঠন ‘বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষেবা’। সেই সঙ্গে তারা চায়, রাজ্যের যত মেয়েদের হস্টেল আছে, সবগুলির সুরক্ষা কঠোর করা হোক।

সেই স্কুলের পড়ুয়াদের মিছিল। সোমবার।  —নিজস্ব চিত্র।

সেই স্কুলের পড়ুয়াদের মিছিল। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

রানাঘাটের কনভেন্টে ঢুকে লুঠতরাজ ও এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সমস্ত কনভেন্টের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার দাবি জানিয়েছে খ্রিস্টানদের মিলিত সংগঠন ‘বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষেবা’। সেই সঙ্গে তারা চায়, রাজ্যের যত মেয়েদের হস্টেল আছে, সবগুলির সুরক্ষা কঠোর করা হোক। সংগঠনের অভিযোগ, রানাঘাটের ঘটনায় প্রমাণিত, সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। খ্রিস্টান সংগঠনগুলির পাশাপাশি রানাঘাটের ঘটনায় আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনও। কলকাতায় তাদের আবাসিক স্কুলগুলির নিরাপত্তা বাড়াতে মিশন উদ্যোগী হয়েছে।

রাজ্যে বিভিন্ন চার্চভুক্ত খ্রিস্টানদের মিলিত সংগঠন ‘বঙ্গীয় খ্রিস্টীয় পরিষেবা’র হিসেব অনুযায়ী, কনভেন্ট অর্থাৎ নান পরিচালিত হস্টেল, যেখানে সন্ন্যাসিনী ও আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা থাকেন এমন জায়গার সংখ্যা কলকাতায় গোটা বিশেক ও রাজ্যের বাকি অংশে হাজার খানেকের বেশি। প্রধানত ওই সব জায়গার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করারই দাবি জানিয়েছে বঙ্গীয় খ্রিস্টিয় পরিষেবা। সংগঠনের বক্তব্য, মেয়েরা আবাসিক হিসেবে থাকেন, রাজ্যের এমন সমস্ত জায়গার নিরাপত্তাই কঠোর করতে হবে। বঙ্গীয় খ্রিস্টীয় পরিষেবার রাজ্য কার্যকরী সভাপতি হেরোদ মল্লিকের অভিযোগ, রাজ্যে নিরাপত্তার সামগ্রিক বাতাবরণ তৈরিতে সরকারি ব্যর্থতার ফলেই রানাঘাটের মতো ঘটনা ঘটছে। সোমবার তিনি বলেন, “স্কুলগুলিতে নজরদারির জন্য নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা আছে। কিন্তু এক সঙ্গে অনেক দুষ্কৃতী চড়াও হলে যে নিরাপত্তারক্ষীদের কিছুই করার থাকে না, সেটাই রানাঘাটে প্রমাণিত হল। রাজ্যে নিরাপত্তার সামগ্রিক বাতাবরণ সরকারকে তৈরি করতে হবে।” এই দাবিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বঙ্গীয় খ্রিস্টীয় পরিষেবা স্মারকলিপিও দেবে। রানাঘাটের ঘটনার প্রতিবাদে কাল, বুধবার ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে একটি প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে খ্রিস্টান সংগঠনগুলি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন না, রানাঘাটের ঘটনার জেরে এখনই সরকারি আবাসিক স্কুলগুলির নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। কনভেন্টের ঘটনাটির পিছনে ‘রাজনৈতিক দলের প্ররোচনা’ আছে বলে মন্তব্য করার সঙ্গে এর জেরে স্কুলের নিরাপত্তা বাড়ানো হলে দুষ্কৃতীদের কাজকেই ‘মান্যতা’ দেওয়া হবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, “স্কুলগুলিতে যথেষ্ট নিরাপত্তা আছে। আরও বেশি সচেতন হওয়া ও নজরদারি বাড়ানো উচিত। এই যে উৎশৃঙ্খলতা, বর্বরোচিত আচরণ, এটা তো বাংলার ঐতিহ্য নয়! এর পিছনে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের প্ররোচনাই দায়ী।”

শিক্ষা দফতর আবাসিক স্কুলগুলির নিরাপত্তার বাড়ানোর ব্যাপারে নতুন করে কোনও নির্দেশিকা দিচ্ছে না। তবে সামগ্রিক ভাবে গোটা রাজ্যের জন্য কোনও বন্দোবস্ত না হলেও বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু ব্যবস্থা হচ্ছে। যেমন, সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্যোগ। সর্বশিক্ষা মিশনের ব্যবস্থাপনায় কলকাতার ১৫টি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল চলছে। স্কুলগুলি প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৫টি আবাসিক স্কুলে দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী থাকে। এর মধ্যে আটটি মেয়েদের স্কুল।

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, স্কুলগুলি যে সব থানার অন্তর্গত, সে সব থানায় চিঠি লিখে নজরদারি বাড়ানোর আবেদন জানানো হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা বলে চিঠি দেওয়া হবে স্কুলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদেরও। রাতে যাতে বহিরাগতরা স্কুলের ভিতরে ঢুকতে না পারে, সেই জন্য স্কুলের নিরাপত্তারক্ষী ও প্রধান শিক্ষককে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ সর্বশিক্ষা মিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে একটি সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE