Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অত দূরেও কেন গুলি লাগল, প্রশ্ন

শুক্রবার ভোরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে ফোন গিয়েছিল বর্মণ পরিবারে। ‘দাদা নেই’ শুনেই কেঁদে ওঠে ডলি। মাকে তা জানাতে গিয়ে কথাই বলতে পারেনি। অঝোরে কেঁদেছে। বুঝতে বাকি ছিল না মায়ের।  সেই থেকে মূর্ছা যাচ্ছেন মা মঞ্জুদেবী। প্রতিবেশীরা তাঁকে সামলাতে পারছেন না।

মৃত তাপস বর্মন। —নিজস্ব চিত্র

মৃত তাপস বর্মন। —নিজস্ব চিত্র

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৮
Share: Save:

স্কুলের কাছেই তাঁদের মিষ্টির দোকান। সেখানে দাঁড়িয়েই দোকান মেরামতির কাজ দেখাশোনা করছিলেন ইসলামপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তাপস বর্মণ। এলাকার লোক তাঁকে মধু বলেই ডাকেন। তাঁরাই বলছেন, আচমকাই গুলি বিঁধে যায় তাঁর শরীরে। পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেই থেকে রাতভর বাড়ির কেউ ঘুমোতে পারেননি। বোন ডলিও জেগে ছিল সারা রাত। ভোরে মেডিক্যাল থেকে ফোন পেয়ে ডলি সেই যে কাঁদতে শুরু করেছে, তা থামেনি। কাঁদছেন বাড়ির সকলেই। তাঁর মা মঞ্জু মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। কখনও ডুকরে কেঁদে উঠে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমার সর্বনাশ হল। যে পুলিশের রক্ষা করার কথা, তারাই আমার ছেলেকে গুলি করে মারল। এর বিচার চাই।’’

শুক্রবার ভোরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে ফোন গিয়েছিল বর্মণ পরিবারে। ‘দাদা নেই’ শুনেই কেঁদে ওঠে ডলি। মাকে তা জানাতে গিয়ে কথাই বলতে পারেনি। অঝোরে কেঁদেছে। বুঝতে বাকি ছিল না মায়ের। সেই থেকে মূর্ছা যাচ্ছেন মা মঞ্জুদেবী। প্রতিবেশীরা তাঁকে সামলাতে পারছেন না।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানোর পর একটা আশা ছিল হয়তো চিকিৎসায় ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু সেই আশার প্রদীপটা এ দিন দপ করে নিভে যেতেই বাড়ির আলো, সমস্ত আনন্দ অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে। থেকে থেকেই ভোর থেকে কান্নার শব্দে বাড়ির চারপাশ হাহাকার করে উঠছে।

তাপস ইসলামপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ওই কলেজেই দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে বোন ডলি। পরিবার সূত্রে দাবি, বৃহস্পতিবার গন্ডগোলের সময় স্কুল থেকে ৫০০ মিটার দূরে তাদের মিষ্টির দোকানে দাঁড়িয়ে ছিল তাপস। মিস্ত্রিদের কাজ দেখভাল করছিল। গোলমাল শুরু হতে দোকানের বাইরে বার হয়েছিল। বাড়ির সকলের অভিযোগ, সে সময় পুলিশের গাড়ি থেকে গুলি লাগে তার শরীরে। চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ে তাপস। কাল রাত থেকেই ঘরে উনুন জ্বলেনি। প্রতিবেশীরা খাবার এনে দিলেও তা মুখে তুলতে পারেননি কেউ। তাপসের বাবা বাদলবাবু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ছেলের সঙ্গে ছিলেন। মিষ্টির দোকান চালিয়েই সংসার চালান। তাপসদের বাড়িতে বসে পড়শি তপন সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘পুলিশই গুলি চালিয়েছে। পুলিশ ভ্যানের ভিতর থেকে গুলি চলেছে। তদন্ত হলেই স্পষ্ট হবে।’’

তাপস দাড়িভিট হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। ঘটনার খবর পেয়ে স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ শোকাহত। এলাকায় মিশুকে বলেই লোকে তাকে জানত। এলাকায় কারও কোনও বিপদ হয়েছে শুনলে ছুটে যেত। এখন তাদের প্রিয় তাপস নেই ভাবতেই পারছেন না পড়শিদের অনেকেই। আর এক পড়শি বাবুলাল সরকার বলেন, ‘‘তাপসকে এ ভাবে প্রাণ দিতে হবে, আমরা ভাবতে পারছি না। পুলিশ কী করল! ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন সামলাতে গিয়ে এলাকার দু’টো তরতাজা প্রাণ কেড়ে নিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Violence Firing Range
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE