Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘ভূত’-কে রেশন দিতে বছরে খরচ ৫০ কোটি

পুরনিগমকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, এ বার ডেথ রেজিস্টার দেখে খাদ্যসাথী প্রকল্পের গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা মৃত তাঁদের নাম বাদ দিতে হবে। সেই চিঠির সঙ্গে দফতরের প্রধান সচিব মনোজ অগ্রবালের নির্দেশিকাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

রেশন তুলতে লাইন। —ফাইল চিত্র

রেশন তুলতে লাইন। —ফাইল চিত্র

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৫:১২
Share: Save:

এ রাজ্যে প্রতি বছর যত লোক মারা যান, রেশন কার্ড বাতিলের সংখ্যা তার থেকে অনেক কম। এমন তথ্য হাতে আসার পরেই ‘অন্য রকম গন্ধ’ পেয়েছিলেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, লক্ষ-লক্ষ মৃত ব্যক্তির নামে প্রতি সপ্তাহে খাদ্যসাথী প্রকল্পের কেজি-কেজি চাল-আটা তুলে নেওয়া হচ্ছে। যার খরচ বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

এই অবস্থায় দফতরের এক শীর্ষ কর্তা সমস্ত জেলা প্রশাসন, পুরনিগমকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, এ বার ডেথ রেজিস্টার দেখে খাদ্যসাথী প্রকল্পের গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা মৃত তাঁদের নাম বাদ দিতে হবে। সেই চিঠির সঙ্গে দফতরের প্রধান সচিব মনোজ অগ্রবালের নির্দেশিকাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রেশন কার্ডের তালিকা থেকে মৃতের নাম বাদ পড়ার যে সংখ্যা, তা রাজ্যের স্বাভাবিক মৃত্যুর হারের সঙ্গে
মিলছে না। অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যুর হারের থেকে অনেক কম সংখ্যক মৃত ব্যক্তির নাম বাতিল হচ্ছে। ফলে বেহাত হয়ে যাচ্ছে কোটি-কোটি টাকার খাদ্য সামগ্রী।

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এক শ্রেণির রেশন ডিলার মৃতের নামে থাকা কার্ড
রেখে দিয়ে রেশনের বরাদ্দ তুলে যাচ্ছেন। এই চক্র বন্ধ করতেই দফতর এ বার থেকে প্রতি মাসে ডেথ রেজিস্টার দেখে মৃতের নামে থাকা কার্ড বাতিল করবে।’’

খাদ্য দফতরের এক অফিসার জানান, এ রাজ্যে মৃত্যুর হার প্রতি হাজার জনসংখ্যায় প্রায় ৬ জন। কিন্তু রেশন কার্ড বাতিল হচ্ছে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় মাত্র দু’জনের। দফতরের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ মৃতের নামে বেআইনি ভাবে রেশন তোলা হচ্ছে।

টাকার হিসেবে সেই পরিমাণটা কত? খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে খাদ্যসাথী প্রকল্প।
ওই প্রকল্পে ৮ কোটি ৫৯ লক্ষ গ্রাহককে ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হয়েছে। কার্ডধারীদের বছরভর খাদ্যশস্য দিতে রাজ্যের খরচ হয় ৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ৬ লক্ষ মৃতের জন্য বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

খাদ্য দফতরের অধিকর্তা যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে প্রথম দফায় ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত ডেথ রেজিস্টার দেখে মৃতের নাম বাতিল করা হোক। প্রতিটি জেলার পুরসভা, জেলা পরিষদ অফিসে জন্মমৃত্যুর রেজিস্টার রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সেই রেজিস্টার দেখে মৃতের নামের তালিকা সংগ্রহ করবেন। পরে
সেই তালিকা পাঠাতে হবে খাদ্য দফতরে। সেই তালিকা দেখে খাদ্য দফতর মৃতের নামে থাকা ডিজিটাল রেশন কার্ড বাতিল করবে। এর
জন্য কী করণীয় তার তিনটি ফরম্যাটও দেওয়া হয়েছে খাদ্য অধিকর্তার
চিঠির সঙ্গে।

এত দিন এ কাজ করা হয়নি কেন? খাদ্যমন্ত্রীর জবাব, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে বাম আমলে বানানো
প্রায় এক কোটি ৩১ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। মৃতের বিষয়টা নজরে আসতেই ফের তৎপর হয়েছে দফতর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ration Card Dead রেশন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE