কলকাতা-সহ রাজ্যে যে অপরাধ বাড়ছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং অপরাধ বাড়ার পিছনে মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেই দায়ী করলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বকরি ইদ, পুজো ও মহরমের সমন্বয় বৈঠকের মঞ্চে অপরাধের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অপরাধের ধরন বদলানোর কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তাঁর অভিযোগের আঙুল মূলত সাইবার ক্রাইমের দিকেই।
রাজ্যে পালাবদলের পরে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্টে রাজ্যের অপরাধ বৃদ্ধির কথা উঠেছে। তা নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়েছে সরকার। এই অবস্থায় অপরাধ বৃদ্ধির কথা বলেও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আগের আমলে অভিযোগ নেওয়া হত না। এখন নেওয়া হয়। অভিযোগ পুলিশের খাতায় লিপিবদ্ধ হওয়াতেই অপরাধ বৃদ্ধি ধরা পড়ছে। ‘‘ডায়েরি না নিলে তো অপরাধের ঘটনা ধরাই পড়বে না,’’ মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।
অপরাধ বৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার কতটা সক্রিয়, তা-ও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, গত চার বছরে রাজ্যে ৯১টি থানা তৈরি হয়েছে। তার ৩০টি মহিলা থানা। এ দিন আরও ১০টি মহিলা থানার অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪৫টি মহিলা থানা-সহ মোট ৮৮টি ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গড়া হয়েছে। ১৯টি মানবাধিকার কোর্ট হয়েছে। অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকেই বীরভূমে শান্তিনিকেতন থানার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকারও প্রশংসা করেন। পুলিশের কাজের পরিধি বাড়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ এখন পুজো, খেলাধুলো, নাচগান, বিয়েবাড়ি, নাটকেও জড়িত থাকে।’’
তবে শুধু পুলিশ নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণ মানুষকেও সজাগ থাকতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বছর পুজোর পরপরই মহরম। ফলে বিসর্জনের দিনক্ষণ কিছু বদলেছে। ২২ অক্টোবর নবমী ও দশমী। ২৪ তারিখ মহরম। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মহরমের মিছিলের জন্য ২৩ ও ২৪ তারিখ বিসর্জন দেওয়া যাবে না। ফলে ২২ তারিখের পরে আবার ২৫ অক্টোবর দুপুর বারোটা থেকে ২৬ অক্টোবর ভোর চারটে পর্যন্ত বিসর্জন হবে। ২৬ তারিখই লক্ষ্মীপুজো। যেহেতু দিন কম, তাই ওই দিন সকাল আটটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত ফের বিসর্জন হবে। পুজো ও মহরম পিঠোপিঠি পড়ায় প্ররোচনায় পা দিতে নিষেধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ জানান, পুজোর সময়ে নিচুস্তর থেকে শীর্ষস্তর পর্যন্ত সব পুলিশকর্মী-অফিসার ডিউটিতে থাকবেন। রাস্তায় বেশি সংখ্যক মহিলা পুলিশও রাখা হবে। সিপি-র কথায়, ‘‘গত বছর পুজোয় কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। ইভ টিজিংয়ের অভিযোগও অনেক কম মিলেছে।’’
এ দিন অবশ্য ‘সুষ্ঠু ভাবে’ পুজো করতে পুলিশ-পুরসভাকেও অতিরিক্ত কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। ওভারহেড গেট করা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। তাতে পুজো কমিটিগুলির আপত্তি আছে। এ দিন ওভারহেড গেটের প্রস্তাব খারিজ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরামর্শ, রাস্তার উপরে গেট না করে পাশে করা হোক। পুজোকর্তারা জানান, এ ভাবে কর্পোরেট সংস্থাগুলি বিজ্ঞাপন দিতে চায় না। তা শুনেই মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াই, ‘‘বিজ্ঞাপনদাতারা এমন বলছেন কেন? এ নিয়ে পুলিশ ও পুরসভা সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করবে।’’ এখানেই শেষ নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, শহরে ২০টি কম বাজেটের পুজোকে কলকাতা পুলিশ ৫ হাজার টাকা করে দেবে। মহিলা পরিচালিত পুজোগুলিকে পুরসভা ১০ হাজার টাকা করে দেবে। সিইএসসি-র বিদ্যুৎ বিলেও পুজোগুলি ১৫ শতাংশ ছাড় পাবে। সার্ভিস ট্যাক্স মকুব করা যায় কি না, তা নিয়ে সিইএসসি-র সঙ্গে বৈঠক করবেন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। মণ্ডপগুলির আশপাশ পরিষ্কার করবেন পুরসভার ‘১০০ দিনের কাজ’-এর কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy