Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

তাদের কাজ চলবে, বলছে স্কুল কমিশন

শিক্ষক-ঘাটতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার সদ্য-স্নাতকদের বিভিন্ন স্কুলে ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগের কথা ভাবছে বলে সোমবার জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইন্টার্ন নিয়োগ হলেও কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগে কোনও সমস্যা হবে না, দাবি স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের।

ইন্টার্ন নিয়োগ হলেও কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগে কোনও সমস্যা হবে না, দাবি স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৫
Share: Save:

স্নাতকদের বিভিন্ন স্কুলে ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগ করলে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কর্মপদ্ধতি গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে বিরোধী শিবির। এই অবস্থায় এসএসসি-র নতুন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া যেমন চলছে, তেমনই চলবে। স্কুলে স্কুলে ইন্টার্ন নিয়োগের সঙ্গে এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের কোনও
সম্পর্কই নেই।’’

শিক্ষক-ঘাটতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার সদ্য-স্নাতকদের বিভিন্ন স্কুলে ইন্টার্ন হিসেবে নিয়োগের কথা ভাবছে বলে সোমবার জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে সমানে। বিরোধীদের বক্তব্য, এর ফলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কর্মপদ্ধতির আর কোনও গুরুত্বই থাকবে না। এই আশঙ্কা যে অমূলক, কমিশনের কাজকর্মের ফিরিস্তি দিয়ে এ দিন সেটা ব্যাখ্যা করেন সৌমিত্রবাবু। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের কাজ শেষ হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম দফায় সুপারিশ করা হয়েছে এবং কিছু কিছু নিয়োগপত্র দেওয়া শুরু হয়েছে প্রার্থীদের। তিনি জানান, মোট ৪২ হাজার ৮৪টি শিক্ষকপদ শূন্য ছিল। গত বছর জুলাই থেকে এই জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৪০৬ জন চাকরি পেয়েছেন। আগামী মার্চের মধ্যে বাকি ২২ হাজার ৬৭৮ জন প্রার্থীও নিয়োগপত্র পেয়ে যাবেন।

সৌমিত্রবাবু জানান, প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকার ২২৪৩টি পদ শূন্য। তার প্যানেল আজ, বুধবার সন্ধ্যায় প্রকাশ করবেন তাঁরা। কাউন্সেলিং হবে ২২, ২৪ এবং ২৫ জানুয়ারি। তার পরে সুপারিশ পাঠানো হবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকাদের নিয়োগ শেষ হবে। নবম দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথমে। উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ১৩ হাজার ৮০ পদ খালি। তার মধ্য়ে ১০ শতাংশ পার্শ্ব শিক্ষকদের জন্য সংক্ষরিত। বাকি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মধ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে সুপারিশ করা হবে। শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষায় যথাক্রমে ১০৩৪ এবং ১০৯৯টি পদ শূন্য। এই দুই ধরনের পদে নিয়োগের সুপারিশ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

স্নাতকদের ইন্টার্ন নিয়োগ নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন তাদের মতামত পরিষ্কার জানিয়ে দিলেও বিতর্ক থামেনি। এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ এ দিন যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানায়, ইন্টার্ন নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এবং ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র যৌথ বিবৃতিতে জানান, ইন্টার্ন নিয়োগের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার তাঁরা সব জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে বিক্ষোভ দেখাবেন। সৃজন বলেন, ‘‘বুথের বাইরে সিভিক ভলান্টিয়ার আর বুথের ভিতরে সিভিক টিচার দিয়ে এ বার ভোটপর্ব সমাধা করতে চাইছে তৃণমূল।’’ একই সুরে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, রাজ্যে ক্রীতদাস নিয়োগ হচ্ছে। ঠিক যেমন পুলিশের বদলে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। এ ভাবে সকলকে দলদাসে পরিণত করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঠিকা শিক্ষক’ নিয়োগের বিরোধিতা করেছে এসইউসি-র যুব সংগঠন ডিওয়াইও। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দেবে ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ইন্টার্ন নিয়োগের চিন্তাভাবনা নেতিবাচক ও অপ্রাসঙ্গিক। আমাদের দাবি, পরিষ্কার ভাবে জানানো হোক, স্কুলে কোনও ইন্টার্ন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Service Commission Recruitment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE