জয়া দত্ত। ফাইল ছবি।
ভর্তি দুর্নীতির জোর ধাক্কা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল জয়া দত্তকে। যে ভাবে একের পর এক কলেজে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে, উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়া এবং তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যে যে ভাবে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে, তাকে ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছে রাজ্যের শাসক দল। তাই জয়াকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ খবর আসে যে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শীর্ষ পদ থেকে জয়াকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। সভানেত্রীকে সরালেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য কমিটি ভাঙা হয়নি। কমিটিতে পরিবর্তন হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে। আপাতত তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পদটিতে কেউ থাকছেন না। ১০ দিনের মধ্যে নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তত দিন পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনের কার্যকলাপ বিশদে খতিয়ে দেখবেন তৃণমূলনেত্রী নিজে।
ভর্তিকে কেন্দ্র করে বিপুল তোলাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল একের পর এক কলেজ থেকে। মেধা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ছাত্র সংগঠনের ‘দাদা’দের টাকা না দিয়ে ভর্তি হওয়া যাচ্ছিল না। পড়াশোনার বিষয় ভেদে আসনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ‘রেট’ নির্ধারণ করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, মাঠে নামতে হয় খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে। জুলুম রোধে প্রথমে পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তার পরে নিজেই পৌঁছে যান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানিয়ে দেন, তোলাবাজি রুখতে ভর্তির নিয়ম বদলে ফেলা হচ্ছে। ভর্তির সময়ে পড়ুয়াকে কলেজে সশরীরে হাজির হতে হবে না। অনলাইনে মেধা তালিকা প্রকাশ করবে কলেজগুলি। তালিকায় যাঁদের নাম থাকবে, তাঁরা নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়ে অনলাইনেই ভর্তি হয়ে যেতে পারবেন। ক্লাস শুরু হওয়ার পর নথিপত্রের ভেরিফিকেশন হবে। জানিয়ে দেন শিক্ষা মন্ত্রী। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে আরও বদলে যাবে ভর্তির নিয়ম, মঙ্গলবার এমনও জানান পার্থবাবু।
আরও পড়ুন: সরকারের চাপে মাথা নোয়ালো যাদবপুর, ভর্তি নম্বরের ভিত্তিতেই
তড়িঘড়ি ভর্তির নিয়ম বদলে ফেলায় তোলাবাজি ঠেকিয়ে দেওয়া গিয়েছে বলে প্রশাসন মনে করছে। কিন্তু পরিস্থিতির এতটা অবনতির জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শীর্ষ নেতৃত্বই দায়ী বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মনে করছেন। জয়া দত্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি বলেই দলনেত্রীর মত। সাই কারণেই বুধবার সন্ধ্যায় তিনি জয়ার অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের কী হবে’? শিক্ষামন্ত্রীর অনলাইন নির্দেশেও আতান্তরে বহু ছাত্রছাত্রী
ভর্তি দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নড়েচড়ে বসার সঙ্গে সঙ্গেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে গিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অন্দরে। সোমবার মধ্য কলকাতার টিএমসিপি নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন জয়া। মঙ্গলবার তিনি বৈঠক করেন দক্ষিণ কলকাতা টিএমসিপির সঙ্গে। মঙ্গলবার বিকেলে জয়া জানিয়ে দেন, গোটা সংগঠনকে কঠোর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কোনও বর্তমান পড়ুয়া দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নয় বলেও অবশ্য জয়া মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাবি করেন। বহিরাগতরা এবং প্রাক্তনীরা বিভিন্ন কলেজে তোলাবাজি করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে জানান, বহিরাগতদের এই জুলুম রোখার দায়ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই। দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারেনি বলে মধ্য কলকাতার চারটি কলেজে তৃণণূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও জয়া মঙ্গলবার জানান। শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও মঙ্গলবার একই সুরে বলেছিলেন, তৃণমূলের কেউ জুলুম করছেন না, জুলুম করছেন বহিরাগতরা।
সে তত্ত্ব থেকে বুধবারও তৃণমূল সরে আসেনি। ভর্তি দুর্নীতির দায় বহিরাগতদের ঘাড়েই চাপিয়ে রাখা হয়েছে এখনও। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। তোলাবাজি যে-ই করুক, আঙুল উঠেছে সংগঠনের দিকে। সভানেত্রী জয়া দত্ত পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি বলেই এমনটা ঘটেছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy