Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কেন ঘন ঘন বজ্রপাত শহরে, চিন্তায় গবেষকেরা

‘লাইটনিং ডিটেক্টর’ মারফত সংগৃহীত তথ্য বলছে, শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধর্মতলা, বালিগঞ্জ-সহ একাধিক এলাকায় আটটি বাজ পড়েছে।

আশঙ্কা: বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে শহরে। ফাইল চিত্র।

আশঙ্কা: বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে শহরে। ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

সময়ের ব্যবধান মাত্র ৪৮ দিন! তার মধ্যেই চলতি বর্ষার মরসুমে বজ্রপাতে মৃত্যুর দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটল।

গত ১০ জুন বিবেকানন্দ পার্কে বাজ পড়ে এক তরুণ ক্রিকেটারের মৃত্যুর পরে শনিবার বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে অজয় মল্লিক নামে এক যুবকের। গুরুতর আহত অবস্থায় আর এক জন হাসপাতালে ভর্তি। এ বারের ঘটনাস্থল ময়দান। দেড় মাসের মধ্যে পরপর দু’টি ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আলোড়ন পড়েছে আবহবিদদের একাংশে। প্রসঙ্গত, ১০ জুন বিবেকানন্দ পার্ক সংলগ্ন এলাকার আবহাওয়াগত কী অবস্থা ছিল, সারা দিন কী ভাবে আবহাওয়ার তারতম্য হয়েছে, ইতিমধ্যেই সেই তথ্য সংগ্রহ করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্স’ বিভাগ। দফতরের ‘লাইটনিং ডিটেক্টর’-এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পরে তা আন্তর্জাতিক এক গবেষণাপত্রে প্রকাশের জন্যও পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই দ্বিতীয় ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই অবাক করেছে গবেষকেদের একাংশকেও। আবহাওয়াবিদ-গবেষক মহলে আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে, হঠাৎ এ শহরের হলটা কী! এত অল্প সময়ের ব্যবধানে বজ্রপাতে দু’টি মৃত্যু কী করে সম্ভব! সাম্প্রতিক সময়ে খাস কলকাতায় এত অল্প ব্যবধানে কবে এমন ঘটেছে, তা মনে করতে পারছেন না কেউই। এক আবহবিদের কথায়, ‘‘শহরে কিছু একটা পরিবর্তন তো হয়েছেই। শহর সংলগ্ন এলাকায় বজ্রপাতের ঘটনা বারবারই ঘটেছে। কিন্তু খাস শহরে যখন পরপর বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটছে, তখন তার কারণ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।’’

‘লাইটনিং ডিটেক্টর’ মারফত সংগৃহীত তথ্য বলছে, শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধর্মতলা, বালিগঞ্জ-সহ একাধিক এলাকায় আটটি বাজ পড়েছে। এর মধ্যে চারটির ক্ষেত্রে ওই যন্ত্রে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ এসেছিল অর্থাৎ, কম বিপজ্জনক এবং চারটির ক্ষেত্রে এসেছিল ‘রেড অ্যালার্ট’ অর্থাৎ, বিপজ্জনক বজ্রপাতের সতর্কবার্তা। শনিবার বিকেল সওয়া ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত যে ক’টি বজ্রপাত হয়েছে, যন্ত্রের বিশ্লেষণে সব ক’টিই ছিল ‘বিপজ্জনক’। এর মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ দুর্ঘটনা ঘটার সময়ে যে বাজটি পড়ে, সেটির ‘পিক কারেন্ট’-এর পরিমাণ ছিল ২.৩৭৩ কিলোঅ্যাম্পিয়ার (কেএ)! অবশ্য তার আগে বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে যে বাজটি পড়েছিল, তার ‘পিক কারেন্ট’-এর পরিমাণ ছিল আরও বেশি, ২.৪৪১কেএ! গবেষকেদের মতে, বাজের ‘পিক কারেন্ট’ই বলে দেয় সেটি কতটা বিপজ্জনক।

আরও পড়ুন: ‘এ ভাবে প্রাণটা চলে গেল?’, ডুকরে উঠলেন মনীষার মা

এর পাশাপাশি, ১০ জুনের ঘটনার সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, সে দিন বিবেকানন্দ পার্কের আবহাওয়া, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসে জলকণার উপস্থিতি-সহ একাধিক বিষয় বজ্রপাতের একদম অনুকূল ছিল। বজ্রপাতের আশঙ্কা কোথায় রয়েছে, তা পরিমাপ করতে অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্স বিভাগের তরফে ‘ওয়েট কম্পোনেন্ট অব অ্যাটমস্ফেরিক রিফ্র্যাকটিভিটি’, সংক্ষেপে ডব্লিউএআর নামক একটি সূচক তৈরি করা হয়েছে। ডব্লিউএআর হল তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, জলকণার উপস্থিতি-সহ বাতাসের নানা উপাদানের সম্মিলিত এক ক্রিয়া। ইতিমধ্যে স্বীকৃত এ সূচকের মাধ্যমে সাইক্লোন-সহ একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বার তার মাধ্যমেই কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় বজ্রপাতের আশঙ্কাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক সুব্রতকুমার মিদ্যার কথায়, ‘‘প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি, কোনও এলাকায় ডব্লিউএআরের পরিমাণ যখন কমেছে, তখনই সেখানে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেড়েছে। গত ১০ জুনের ঘটনায় তেমনটাই ঘটেছে, শনিবারের ঘটনাটিও বিশ্লেষণ করে দেখছি।’’

গবেষকেরা আরও জানাচ্ছেন যে, শুধু কলকাতাতেই নয়, সারা বিশ্বেই বজ্রপাতের সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে। এখন সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব বলে তবু কিছুটা রক্ষা। বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও আগাম সতর্কতা যাতে সাধারণ মানুষ জানতে পারেন, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে গবেষক মহলে। এক গবেষকের কথায়, ‘‘লাইটনিং ডিটেক্টরের মাধ্যমে বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগে অ্যালার্ট আসে। সেই অ্যালার্ট যদি কোনও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়, তা হলে বজ্রপাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমতে পারে। তবে এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lightning Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE